
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের সমসাময়িক নাট্যজগতে একদিকে যেমন নবীন অভিনয়শিল্পীদের আগমন ঘটছে, অন্যদিকে তেমনি কিছু মেধাবী ও পরিশ্রমী অভিনেত্রী নিজেদের অবস্থান পোক্ত করে নিয়েছেন দর্শকের হৃদয়ে। তাঁদের অভিনয়ের পরিধি শুধু টেলিভিশন নাটকে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ইউটিউব, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, বিজ্ঞাপন এবং এমনকি বড় পর্দাতেও তাঁরা নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন সমানভাবে। এই প্রজন্মের অভিনেত্রীদের মধ্যে ছয়জন রয়েছেন নাটকশিল্পের চালকের আসনে, যারা নিজেদের মেধা, দক্ষতা এবং ধারাবাহিকতায় জয় করে নিয়েছেন কোটি দর্শকের ভালোবাসা। এই তালিকায় রয়েছেন— জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি, তানিয়া বৃষ্টি, তানজিম সাইয়ারা তটিনী, কেয়া পায়েল, সাদিয়া আয়মান, এবং নাজনীন নাহার নিহা।
জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি: ট্রেন্ডিংয়ে অভ্যস্ত মুখ
যেকোনো সময়ের আলোচিত ও ভাইরাল নাটকের তালিকা তৈরি করলে শুরুর দিকে নাম আসে জান্নাতুল সুমাইয়া হিমির। গত কয়েক বছর ধরেই তিনি নাট্যজগতের সবচেয়ে ব্যস্ত এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিশেষ করে ইউটিউবভিত্তিক নাটকগুলোর ট্রেন্ডিং তালিকায় হিমির নাটক প্রায় নিয়মিত অবস্থান নেয়। তিনি এমন একজন শিল্পী, যাঁর প্রতিটি কাজেই দর্শকের জন্য থাকে চমক, থাকে সহজাত অভিনয়ের মুগ্ধতা।
ঈদকে ঘিরে মুক্তিপ্রাপ্ত তার ডজনখানেক নাটক যেমন টিআরপিতে ভালো করেছে, তেমনি ইউটিউবেও অর্জন করেছে কোটি ভিউ। হিমি বলেন, ‘দর্শকরা আমাকে পছন্দ করছেন, এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। তাদের ভালোবাসার কারণেই এত ব্যস্ততা। কাজ করার উৎসাহ পাই দর্শকের রেসপন্স থেকে।’
তানিয়া বৃষ্টি: নাটক মানেই ব্যস্ততা
দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে নাটকে কাজ করে যাচ্ছেন তানিয়া বৃষ্টি। মোশাররফ করিমের সঙ্গে জুটি বেঁধে প্রায় ৫০টির বেশি নাটকে অভিনয় করে ইতোমধ্যেই দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। সমান তালে কাজ করছেন টিভি নাটক ও ইউটিউব নাটক—দুটোতেই।
তানিয়া মনে করেন, অভিনয় শুধু পেশা নয়, এটা তাঁর জীবন। ‘এটা এখন শুধু ভালোবাসার জায়গা নয়, দায়িত্বও বটে। চেষ্টা করি ভক্তদের ভালো কনটেন্ট উপহার দিতে।’
তানজিম সাইয়ারা তটিনী: ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা
তটিনী নাট্যাঙ্গনের অন্যতম তরুণ ও প্রতিশ্রুতিশীল মুখ। তার অভিনয়শৈলীতে রয়েছে স্বাভাবিকতা, সরলতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা। সে কারণেই দর্শকদের মধ্যে তার চাহিদা দ্রুত বেড়েছে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে তার একাধিক নাটক মুক্তি পায়, যেগুলো বেশ সাড়া ফেলেছে।
অভিনয়ের ফাঁকে অবকাশ যাপনে থাইল্যান্ড ঘুরে এলেও এখন তিনি প্রস্তুত আবার ক্যামেরার সামনে ফেরার। তটিনী বলেন, ‘ভালোবাসা পাচ্ছি, তাই ভালো কাজ করার চেষ্টা করছি। দর্শকের ভালোবাসাই আমার চালিকাশক্তি।’
কেয়া পায়েল: নতুন প্রজন্মের পরিশ্রমী অভিনেত্রী
কেয়া পায়েল প্রথমে পরিচিতি পান চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। তবে সময়ের সঙ্গে নাটকে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন দৃঢ়ভাবে। উৎসবকেন্দ্রিক নাটকে তার অংশগ্রহণ বরাবরই চোখে পড়ার মতো। তাঁর অভিনীত নাটকগুলোতে সমসাময়িক গল্প আর প্রাণবন্ত অভিনয়ের সমন্বয় দর্শককে আকৃষ্ট করে।
তিনি বলেন, ‘অভিনয় নিয়ে অনেক স্বপ্ন আমার। চেষ্টা করছি নিজেকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে উপস্থাপন করতে। নাটকের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনেও কাজ করছি। নিয়মিত নিজেকে আপডেট রাখছি।’
সাদিয়া আয়মান: বহুমাত্রিকতার পরিচয়
নাটক, সিনেমা, ওটিটি—তিন মাধ্যমেই কাজ করে ইতোমধ্যে নিজের অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করেছেন সাদিয়া আয়মান। ছোটপর্দার পাশাপাশি বড়পর্দায়ও তার উপস্থিতি প্রশংসিত হয়েছে। তার প্রথম সিনেমা ছিল ‘কাজলরেখা’, আর সর্বশেষ ঈদে মুক্তি পেয়েছে ‘উৎসব’।
সাদিয়া বলেন, ‘আমি নিয়মিত কাজ করতে ভালোবাসি। দর্শক যখন ভালোবাসা দেয়, তখন পরিশ্রম সার্থক মনে হয়। সবসময় চাই, নতুন নতুন কাজ দিয়ে তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে।’
নাজনীন নাহার নিহা: স্বল্প সময়ে দৃষ্টিগ্রাহ্য সাফল্য
নাটকে তার পথচলা খুব বেশি দিনের নয়, কিন্তু এরইমধ্যে জনপ্রিয় অভিনেতাদের বিপরীতে কাজ করে দারুণভাবে নজর কেড়েছেন নাজনীন নাহার নিহা। বিশেষ করে জিয়াউল ফারুক অপূর্বর সঙ্গে তার একাধিক নাটক দর্শকের হৃদয় স্পর্শ করেছে।
নিহা বলেন, ‘আমি গতানুগতিক গল্পে কাজ করতে চাই না। প্রতিটি কাজেই কিছু না কিছু বার্তা থাকে। দর্শক প্রশংসা করছেন, এটাই আমাকে সাহস যোগায়।’
এই ছয় অভিনেত্রী বর্তমানে নাটকের মূল স্রোতধারায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাদের কাজ কেবল ইউটিউবে ট্রেন্ডিং বা টিভির টিআরপি তালিকাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তারা প্রমাণ করছেন—নাটক আজও দর্শকের ভালোবাসার অন্যতম প্রধান মাধ্যম।
যদিও প্রতিনিয়ত নতুন মুখ আসছে, প্রযুক্তি বদলে যাচ্ছে, গল্পের ধরণও পাল্টাচ্ছে—তবুও এই ছয়জন অভিনেত্রী নিজেদের মেধা, পরিশ্রম আর অভিনয়ের প্রতি দায়বদ্ধতা দিয়ে নাটকের জগতে হয়ে উঠেছেন অপ্রতিরোধ্য।
তাদের পথচলা এই শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করবে—এমনটাই প্রত্যাশা নাটকপ্রেমীদের।
বাংলাবার্তা/এমএইচ