
ছবি: সংগৃহীত
নতুন অর্থবছরের (২০২৪–২৫) শুরুতেই দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে স্বস্তির বার্তা দিয়েছে সরকার। বিভিন্ন সরকারি গুদামে চাল ও গম মিলিয়ে মোট খাদ্য মজুদ দাঁড়িয়েছে ১৭.৬৪ লাখ মেট্রিক টনে, যা গত অর্থবছরের শুরুতে থাকা মজুদের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ টন বেশি। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মজুদ, সংগ্রহ ও বিতরণের হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরে প্রেস উইং জানায়, গত বছরের ১ জুলাই (২০২৩) দেশের মোট খাদ্য মজুদ ছিল ১৪.৭৩ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চালের পরিমাণ ছিল ১০.৬০ লাখ মেট্রিক টন এবং গম ছিল ৪.১৩ লাখ টন।
তবে এবছর অর্থবছরের শুরুতেই পরিস্থিতি আরও ইতিবাচক। চলতি অর্থবছরের শুরুতে চালের মজুদ দাঁড়িয়েছে ১৫.৪১ লাখ মেট্রিক টনে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৪.৮১ লাখ টন বেশি। এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ মজুদের রেকর্ড বলেও মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে গমের মজুদ তুলনামূলকভাবে কিছুটা কমেছে। বর্তমানে গমের মজুদ রয়েছে ২.২৩ লাখ মেট্রিক টন, যা গত বছরের ৪.১৩ লাখ টনের তুলনায় প্রায় ১.৯ লাখ টন কম।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে, গমের কম মজুদের পেছনে মূল কারণ হলো– অভ্যন্তরীণ উৎস এবং আমদানিকৃত গমের চেয়ে বিতরণ বেশি হওয়া। বিশেষ করে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ভিজিএফ, ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় গমের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এই ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, চালের উল্লেখযোগ্য মজুদ এবং সুশৃঙ্খল খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থাপনার কারণে দেশ বর্তমানে একটি স্থিতিশীল খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে রয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী সম্প্রতি এক অভ্যন্তরীণ বৈঠকে বলেন, “মজুদের এই ইতিবাচক ধারা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা পরিকল্পনাকে আরও শক্তিশালী করেছে। আমাদের লক্ষ্য শুধু মজুদ বাড়ানো নয়, এর সঙ্গে সমন্বিতভাবে বিতরণ কার্যক্রমও উন্নত করা।”
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে গমের মজুদও বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। এজন্য স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহ প্রদান, পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী গম আমদানির প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
খাদ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে খাদ্য মজুদের এই ইতিবাচক প্রবণতা সরকার পরিচালিত সামাজিক সহায়তা কর্মসূচিগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। তবে তারা গমের মজুদ কমে যাওয়াকে একটি সতর্ক সংকেত হিসেবেও দেখছেন। তাদের মতে, চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য রক্ষায় খাদ্য বিভাগকে আরও কৌশলী হতে হবে, বিশেষ করে বৈশ্বিক বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বা সরবরাহ সংকটের ঝুঁকি মাথায় রেখে।
বর্তমানে দেশে খাদ্য বিভাগের হাতে ১৭.৬৪ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য রয়েছে, যার মধ্যে চাল ১৫.৪১ লাখ মেট্রিক টন এবং গম ২.২৩ লাখ মেট্রিক টন। নতুন মৌসুমে এই মজুদ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
সার্বিকভাবে, এই খাদ্য মজুদ সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে আগামী মাসগুলোতে গমের সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বাড়তি নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
বাংলাবার্তা/এমএইচ