
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিকে শক্তিশালী ও আধুনিক করতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ব্যালট প্রকল্পে ৪.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাপান। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) অধীন এই প্রকল্পের আওতায় দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করা হবে।
বুধবার (২ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন, ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি এবং জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যুরোর মহাপরিচালক ইশিজুকি হিদেও।
অনুষ্ঠানে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আখতার আহমেদ, ইউএনডিপির নির্বাচন ও গভর্ন্যান্স সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা, নির্বাচন কমিশনের সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং ঢাকাস্থ কূটনৈতিক প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে ১৮ জুন অস্ট্রেলিয়া সরকার একই প্রকল্পে ২ মিলিয়ন ডলারের অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সবমিলিয়ে ব্যালট প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮.৫৩ মিলিয়ন ডলার, যার একটি বড় অংশ আসছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, এই অর্থ ব্যবহার করা হবে ইসির প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে— কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা দক্ষতা উন্নয়ন, স্বচ্ছ ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ইলেকটোরাল রোল ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণ, নাগরিক ও ভোটার শিক্ষার সম্প্রসারণ, নারী, তরুণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণে উৎসাহ প্রদান এবং নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি বিশ্বাসযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত হবে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে জনগণের আস্থা বাড়বে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, “একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রযুক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক দিকগুলোতে উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। জাপান সরকার যে উদার সহযোগিতা প্রদর্শন করেছে, তা আমাদের এই যাত্রাকে গতিশীল করবে। গণতন্ত্র শুধু একটি প্রক্রিয়া নয়, এটি একটি মূল্যবোধ। সেই মূল্যবোধ বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের এই সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এই অনুদানের প্রতিটি ডলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যবহার করা হবে। ইউএনডিপি দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের পাশে রয়েছে। তাদের সহযোগিতা ও তদারকির মাধ্যমে কাজটি বাস্তবায়িত হবে।”
জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি বলেন, “বাংলাদেশ এখন গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে। এ সময় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন অত্যন্ত জরুরি। জাপান সবসময় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও জনগণের সিদ্ধান্তকে সম্মান করে এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই প্রকল্পে আমাদের অংশগ্রহণ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। আমরা আশা করি, এই সহায়তা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এবং দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর হবে।”
ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, “জাপানের সহায়তা এবং অংশীদারত্বের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা শুধু একটি নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন করব না, বরং দীর্ঘমেয়াদে একটি জবাবদিহিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও টেকসই নির্বাচনি কাঠামো গড়ে তুলতে পারব।”
তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণ নির্বাচন একটি দেশের স্থিতিশীলতা, সামাজিক সম্প্রীতি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত। ইউএনডিপি বাংলাদেশে নির্বাচনি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভবিষ্যতেও কাজ করে যাবে।”
অনুষ্ঠান শেষে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “ইসি অত্যন্ত গঠনমূলকভাবে ইউএনডিপির সহায়তায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। প্রাক-নির্বাচনি প্রস্তুতি থেকে শুরু করে ভোটের দিন এবং ফলাফল ঘোষণার পরবর্তী সময় পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে এই প্রকল্পের উপাদানগুলো কাজে লাগবে।”
তিনি আরও জানান, “দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি, ভোটার শিক্ষার প্রসার, প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রশিক্ষণসহ একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আশা করি, জাপান সরকারের সহায়তা এই উদ্যোগকে আরও শক্তিশালী করবে।”
একটি গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে আন্তর্জাতিক সহায়তা একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। জাপানের এই ৪.৮ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি শুধুমাত্র একটি অনুদান নয়—এটি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আস্থা ও সমর্থনের প্রতীক। নির্বাচনি ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর, স্বচ্ছ ও গণমুখী করতে এই সহযোগিতা ভবিষ্যতের পথচলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই আশা সংশ্লিষ্ট মহলের।
বাংলাবার্তা/এমএইচ