
ছবি: সংগৃহীত
নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকটি ছিল সম্পূর্ণভাবে সৌজন্য সাক্ষাৎ—নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ বা নির্বাচনী শিডিউল নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন সিইসি।
বৈঠকের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে সিইসি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমার এটি ছিল প্রথম সৌজন্য সাক্ষাৎ। এখানে আমরা দুই পক্ষই আমাদের নিরপেক্ষ অবস্থান তুলে ধরেছি। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে চান, এমন বার্তাই দিয়েছেন। আমরা তাকে জানিয়েছি, নির্বাচন কমিশন সে লক্ষ্যেই সম্পূর্ণ প্রস্তুত হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ফুল গিয়ারে প্রস্তুতি নিচ্ছি—গাড়ির চারটা গিয়ার একসঙ্গে যদি চালাতে হয় পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার মতো করে, তেমন প্রস্তুতি চলছে। মাঠ পর্যায়ে সব জায়গায় আমরা সক্রিয় হচ্ছি।”
নির্বাচনের তারিখ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, “তারিখ বা শিডিউল এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এসব সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যথাসময়ে তা সবাই জানতে পারবেন। সবাইকে অনুরোধ করব ধৈর্য ধরতে। ধৈর্যহীন হলে বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি হয়। জাতীয় নির্বাচন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ, এটি ধাপে ধাপে সম্পন্ন করতে হয়।”
নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নাসির উদ্দীন বলেন, “বর্তমানে আমাদের সব প্রস্তুতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে জাতীয় নির্বাচন। কারণ, প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকেও স্থানীয় নির্বাচনের কোনো উল্লেখ আসেনি। তার সকল বক্তব্যেই স্পষ্টভাবে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেসব প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস তিনি দিয়েছেন। ফলে আমরাও সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি।”
ইসি পুনর্গঠন বা নতুন কোনো রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, সিইসি বলেন, “আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব মতামত থাকতেই পারে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো নিরপেক্ষভাবে সংবিধান ও প্রচলিত আইনের আলোকে কাজ করা।”
নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা নিয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সিইসি জানান, “লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলের সম্ভাব্য সময়সূচি উঠে এসেছে। আমরাও সে দুই সময়সীমাকে মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের ওপর নির্ভর করে। সরকার নির্বাচন আয়োজনের যে সিদ্ধান্ত নেবে, নির্বাচন কমিশন তাতে সাড়া দেওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত।”
দুই সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কারাবন্দি থাকা এবং এই প্রেক্ষাপটে দায়িত্ব পালনের অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, “বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আদালতের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। তবে অতীতের ভুল থেকে আমরা শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছি, যেন ভবিষ্যতে নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি সুরক্ষিত থাকে এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব খুবই স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে দলগতভাবে কাজ করছি, যাতে একটিও ভুল বা অনিয়ম না ঘটে।”
নির্বাচনী তফসিলের ঘোষণা ও প্রস্তুতির বিষয়ে নির্দিষ্ট সময় জানাতে না চাইলেও, সিইসি আশ্বস্ত করে বলেন, “যখনই সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেবে, তখনই আমরা প্রস্তুত থাকব। আমাদের প্রস্তুতি হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের প্রতি প্রতিশ্রুতিকে ঘিরে—দেশ-বিদেশে জাতির কাছে যেটা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেই অনুযায়ীই আমরা এগোচ্ছি।”
এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং প্রস্তুতি নিয়ে জনমনে থাকা উদ্বেগ দূর করতে কমিশন ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে বলেও জানান সিইসি। মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত সংলাপের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সর্বশেষে তিনি আবারও বলেন, “এটা রাজনৈতিক না, এটা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। আমাদের কাজ নিরপেক্ষ থেকে জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন করা। তাই সবাইকে অনুরোধ করব বিভ্রান্তিমূলক তথ্য এড়িয়ে চলতে এবং নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ