
ছবি: সংগৃহীত
দেশজুড়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকায় জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও একজন নারী মারা গেছেন। একই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪১৬ জন।
বুধবার (২ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, গত একদিনে ঢাকার বাইরে আক্রান্ত হয়েছেন ৩২২ জন, যা মোট আক্রান্তদের প্রায় ৭৭ শতাংশ। রাজধানীর তুলনায় ঢাকার বাইরের জেলাগুলোর ডেঙ্গু পরিস্থিতি বর্তমানে আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯৮ জনে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪৪ জন। নিহতদের মধ্যে ২৪ জন পুরুষ এবং ২০ জন নারী।
বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ও জেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ার এই সময়ে স্বাস্থ্য খাতকে বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বাইরের অঞ্চলে সচেতনতার অভাব, অপর্যাপ্ত মশা নিধন কার্যক্রম এবং জলাবদ্ধতার মতো কারণগুলো ডেঙ্গু বিস্তারের জন্য দায়ী। তারা আরও জানান, অনেক রোগী জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসলেও ডেঙ্গু পরীক্ষা না করানোর ফলে প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষজ্ঞরা জরুরি ভিত্তিতে মশা নিধনের কার্যক্রম জোরদার করা, ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসা সহজলভ্য করা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। একই সঙ্গে জনগণকে সচেতন করতে আরও কার্যকর প্রচারাভিযান চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য পর্যবেক্ষণ করে পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, জ্বর হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং ডেঙ্গু পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে। পাশাপাশি বাসা ও আশপাশ পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি অপসারণ, মশারি ব্যবহার এবং মশা প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণে সবাইকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সাম্প্রতিক এই পরিসংখ্যান আবারও প্রমাণ করে, ডেঙ্গু এখন আর শুধু শহুরে সমস্যা নয়—এর বিস্তার ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম ও মফস্বল অঞ্চলেও। ফলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া কার্যকর মোকাবিলা সম্ভব নয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ