
ছবি: সংগৃহীত
ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ আজকের দিনে এক অত্যন্ত সাধারণ এবং দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, যা জীবনযাপনের ধরন ও খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি যে উপদেশটি পান, তা হলো—মিষ্টি খাবার থেকে দূরে থাকা। চিনি বা চিনি-যুক্ত খাদ্যদ্রব্য, যেমন মিষ্টি, চকলেট, কোমল পানীয় কিংবা অতিমাত্রায় মিষ্টি ফল, সেগুলোর প্রতি প্রাকৃতিকভাবেই নিরুৎসাহিত করা হয়। কারণ এগুলো রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার পরিমাণ হঠাৎ করেই বাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু আপনি জানেন কি, ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যতালিকা থেকে শুধু মিষ্টি নয়, কিছু নির্দিষ্ট ধরনের মাছও বাদ দিতে হতে পারে?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্র হচ্ছে সঠিক জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস গঠন করা। এর অংশ হিসেবে শুধু চিনি নয়, এমন অনেক খাদ্যদ্রব্য আছে, যেগুলো অতিরিক্ত খেলে শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাদের মতে, একজন ডায়াবেটিস রোগীর প্রতিদিনের খাবারে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা জরুরি। এই ভারসাম্য বজায় রাখতে গেলে খাদ্য বাছাইয়ে সাবধান হতে হবে, বিশেষ করে প্রোটিন উৎস হিসেবে যেসব মাছ বেছে নেওয়া হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে বিশেষভাবে যে দুটি মাছের কথা বারবার চিকিৎসকেরা উল্লেখ করেন, তা হলো—বড় পাকা পোনা মাছ এবং চিংড়ি মাছ। এই মাছদুটিতে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া কিছু কিছু সামুদ্রিক মাছেও উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল বিদ্যমান, বিশেষত যেগুলো বড় ও তৈলাক্ত প্রজাতির।
চিংড়ি মাছের ক্ষেত্রে আরও একটি সমস্যা হলো, এটি রান্না করার সময় সাধারণত বেশি তেল ও মসলা ব্যবহার করা হয়। চিংড়ি ভাজা কিংবা ঝাল রান্নাগুলোতে অতিরিক্ত তেল ও ঝাল ব্যবহার রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। অপরদিকে, বড় পোনা মাছ—বিশেষ করে যেগুলো পুকুরে অধিক ফিড খাইয়ে দ্রুত বড় করা হয়—তা প্রাকৃতিকভাবে উচ্চ ফ্যাট ও কোলেস্টেরলযুক্ত হয়ে পড়ে। এ মাছগুলো আবার অনেক সময় ডিপ ফ্রাই করে খাওয়া হয়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
সব সামুদ্রিক মাছ ক্ষতিকর নয়, বরং অনেক সামুদ্রিক মাছ—যেমন টুনা বা সালমন—স্বাস্থ্যকর ও উচ্চমানের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর, যা ডায়াবেটিস রোগীর হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখার জন্য উপকারী। কিন্তু কিছু সামুদ্রিক মাছ যেমন কাঁকড়া, স্কুইড বা বড় সাইজের তেলমাছ, এগুলোতে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল উচ্চ হওয়ায় এগুলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। বিশেষ করে যারা আগে থেকেই হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা স্থূলতায় ভুগছেন, তাদের জন্য বিষয়টি আরও গুরুতর।
তবে মাছ একদিকে যেমন উচ্চ মানের প্রোটিনের উৎস, তেমনি এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। সুতরাং মাছ খাওয়া একেবারে বাদ না দিয়ে, কীভাবে মাছ খাওয়া যায় তা জানা জরুরি।
চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন— মাছ ভাজা না করে সিদ্ধ, গ্রিল অথবা স্টিম করে খাওয়া উচিত, অল্প তেল ও ঝাল-মসলা দিয়ে রান্না করা উচিত, বড় পাকা পোনা, চিংড়ি এবং উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত সামুদ্রিক মাছ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত বা সীমিত পরিমাণে খেতে হবে এবং সপ্তাহে অন্তত ২ দিন এমন মাছ খাওয়া উচিত যেগুলোতে ওমেগা-৩ বেশি, যেমন রুই, কাতলা, টুনা বা সালমন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য শুধুমাত্র ওষুধ নয়, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও সচেতন জীবনধারাই সবচেয়ে বেশি কার্যকর। অনেক সময় আমাদের প্রিয় খাদ্যদ্রব্যগুলোকেও বাদ দিতে হয়, যদি সেগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়। মাছ খেতে হবে বুদ্ধিমানের মতো। যেসব মাছ দেহে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বা ফ্যাট সরবরাহ করে, সেগুলোকে ‘সীমিত’ রাখাই ভালো। সঠিক মাছ বাছাই ও স্বাস্থ্যকর রান্নার মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগীরাও উপভোগ করতে পারেন সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যসম্মত একটি খাদ্যতালিকা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ