
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে নিরাপত্তার দিক থেকে আরও বেশি সুরক্ষিত ও আধুনিক করতে নতুন ছয় দফা নিরাপত্তা নির্দেশনা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। সোমবার (১ জুলাই) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব পদক্ষেপের কথা জানানো হয়। সম্প্রতি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর এই সিদ্ধান্তকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশেষ করে, ভিআইপি (Very Important Person) ও ভিভিআইপি (Very Very Important Person) যাত্রীদের লাগেজ বা ব্যাগেজ স্ক্রিনিং নিয়ে যেভাবে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলোর প্রেক্ষিতে এবার তাদের ব্যাগ তল্লাশিতে বিশেষ মনোযোগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার ব্যতিক্রম বা গাফিলতি না করতে কঠোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
ছয় দফা নতুন নির্দেশনার বিস্তারিত
১. ভিআইপি ও ভিভিআইপিদের ব্যাগ স্ক্রিনিংয়ে অধিকতর মনোযোগ: বিমানবন্দরে যে ধরনের স্ক্যানিং প্রক্রিয়া রয়েছে, সেখানে এখন থেকে বিশেষ শ্রেণির যাত্রীদের ব্যাগের স্ক্রিনিংয়ে আরও গভীরভাবে মনোযোগ দেওয়া হবে। এর ফলে ভিআইপি যাত্রীদের ব্যাগ ‘বিশেষ প্রোটোকল’ বা ‘বিশেষ সুবিধা’ পেয়ে ছাড় পাবে— এমন ধারণা বাতিল হয়ে যাচ্ছে।
২. অ্যাভসেক সদস্যদের নিয়মিত সচেতনতামূলক ব্রিফিং ও নির্দেশনা প্রদান: বিমানবন্দর নিরাপত্তা ইউনিট (AVSEC)-এর প্রতিটি সদস্যকে এখন থেকে নিয়মিত নিরাপত্তা ঝুঁকি, আচরণ বিধি ও নতুন নির্দেশনা সম্পর্কে সচেতন করা হবে। তাদের মনোভাব ও দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টিও এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
৩. সিসিটিভি মনিটরিং টিমের জন্য বিশেষ নির্দেশনা: বিমানবন্দরের সিসিটিভি মনিটরিং ইউনিটকে আরও সক্রিয় করা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যাগ স্ক্যানিং, প্রবেশপথ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নজরদারি বাড়ানোর জন্য তাদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সন্দেহভাজন যাত্রী বা ব্যাগ সনাক্তে কার্যকর পর্যবেক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
৪. উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাগের ক্ষেত্রে ম্যানুয়াল চেক বাধ্যতামূলক: মেটাল ডিটেক্টর ও এক্স-রে মেশিনে স্ক্যান করার পর যেসব ব্যাগকে 'হাই রিস্ক' ক্যাটাগরিতে ধরা পড়বে, সেগুলো কেবল যান্ত্রিক স্ক্যানেই শেষ নয়— বাধ্যতামূলকভাবে ম্যানুয়াল (হাতে হাতে) চেক করা হবে।
৫. ফায়ার আর্মস (অস্ত্র) বহনে পূর্বানুমতি ও রেকর্ড সংরক্ষণ: কোনো ব্যক্তি যদি বিমানবন্দরে আগ্নেয়াস্ত্র (লাইসেন্সপ্রাপ্ত হলেও) নিয়ে প্রবেশ করেন, তাহলে আগে থেকেই তার পূর্বানুমতি থাকতে হবে। পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র বহনের যাবতীয় তথ্য যথাযথভাবে রেকর্ড করে রাখতে হবে।
৬. নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন: যদি নিরাপত্তা লঙ্ঘনের (Security Breach) কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সেই সঙ্গে ঘটনার ধরন অনুসারে ভবিষ্যতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনাও দেওয়া হবে।
কেন এই বাড়তি পদক্ষেপ?
সম্প্রতি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে একাধিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমালোচনার মুখে পড়ে কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে ভিআইপিদের লাগেজ স্ক্যান না করার অভিযোগ, অস্ত্র বহনের তথ্য না থাকা, স্ক্যানার এড়িয়ে যাতায়াতসহ নানা ঘটনা আলোচনায় আসে। ফলে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা এবং সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকি প্রতিরোধের জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ জরুরি হয়ে দাঁড়ায়।
আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে উদ্যোগ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন সংস্থা (ICAO)-র মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশকে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এই নতুন ছয় দফা নির্দেশনা সেই প্রচেষ্টার অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।
একজন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, "নিরাপত্তা মান বজায় রাখতে গেলে ভিআইপি হোক বা সাধারণ যাত্রী— সবার জন্যই এক নীতিমালা প্রযোজ্য হতে হবে।"
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ততম বিমানবন্দর। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। তাই নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়াই স্বাভাবিক। নতুন ছয় দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ কতটা কঠোর এবং কার্যকরভাবে এগোয়, তা সময়ই বলে দেবে। তবে একথা স্পষ্ট—এখন থেকে স্ক্যানিং আর শুধু নিয়ম পালন নয়, বরং নজরদারি ও মনোযোগের বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ