
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় গঠনমূলক ও আন্তরিক একটি ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার সুদৃঢ় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ও মার্কো রুবিওর ফোনালাপে বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়া, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন এবং রোহিঙ্গাদের ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। এছাড়া ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার গুরুত্ব এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এই ফোনালাপের প্রসঙ্গে জানান, উভয় নেতা যৌথভাবে অর্থনৈতিক সহযোগিতা গড়ে তোলা এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তারা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একযোগে কাজ করার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য ও রেমিট্যান্সের প্রধান উৎস যুক্তরাষ্ট্র হওয়ায় শুল্ক সংক্রান্ত ইস্যুতে আলোচনা বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। ড. ইউনূস ও মার্কো রুবিও উভয়েই শুল্ক নিয়ে আলোচনাটি শীঘ্রই সম্পন্ন করার আশাবাদ প্রকাশ করেছেন, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির পথ সুগম করবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক স্থগিতকরণের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার জন্য তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। তারা একটি উদ্যোগ প্যাকেজ নিয়ে কাজ করছেন, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিমালা অনুসারে কার্যকর হবে।
টেলিফোন আলাপের সময় ড. ইউনূস বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থনের আবেদন জানান। তিনি উল্লেখ করেন, “আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এই নির্বাচনে দেশের তরুণ-তরুণীরা প্রথমবার ভোট দেবেন।”
তিনি বলেন, “বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচন ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে, যা পূর্ববর্তী সরকার ধ্বংস করেছিল।” তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান সংলাপ দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় সংস্কার আনবে।
ফোনালাপে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ও সহযোগিতা নিয়ে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জানান, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে এবং বর্তমানে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য বাস্তবসম্মত সমাধানের সম্ভাবনা বেড়েছে, যা বাংলাদেশও গুরুত্বসহকারে কাজ করছে।
দুই নেতা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীলতা রক্ষা ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়েও কথা বলেছেন। এছাড়া, ড. ইউনূস মার্কো রুবিওকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান, যাতে তিনি সরেজমিনে দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, এই সফর দেশের তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হবে।
ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউয়ের সঙ্গে একটি সফল বৈঠকে অংশ নিয়েছেন, যেখানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার হয়েছে।
এই ফোনালাপের মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপ এবং সহযোগিতার অঙ্গীকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই ফোনালাপকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে শুল্ক ইস্যুতে দ্রুত সমাধানের আশাবাদ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন ও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এভাবেই দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সহযোগিতার নতুন এক অধ্যায় শুরু হচ্ছে, যা অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ