
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ-পাকিস্তান ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বিতা সবসময়ই ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। দুই দেশের ক্রিকেটীয় ইতিহাসে যতই সীমিত সংখ্যক দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হয়ে থাকুক না কেন, প্রতিটি ম্যাচেই থাকে উত্তেজনা, থাকে টানটান আবহ, থাকে নতুন প্রতিভা দেখার সুযোগ। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী মাসে আবারও বাংলাদেশ সফরে আসছে পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দল। তবে এবার দলটিতে থাকবে বড় একটি চমক—দলের তিন তারকা ক্রিকেটার বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান এবং শাহিন শাহ আফ্রিদি থাকছেন না এই সফরে।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) কর্তৃক নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, ২০, ২২ ও ২৪ জুলাই মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এই তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এরই মধ্যে মাঠ প্রস্তুত, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা জোরদার এবং সফরের আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তবে সিরিজের কেন্দ্রবিন্দুতে যে বিষয়টি বেশি আলোচিত হচ্ছে, তা হলো পাকিস্তান দলের প্রধান তিন তারকার অনুপস্থিতি।
পাকিস্তানের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, পিসিবি দলটিকে দুটি পরপর দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলাতে চায়—প্রথমটি বাংলাদেশে, পরবর্তীটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। তবে এই সফরগুলোর জন্য দল গঠনের ক্ষেত্রে বোর্ড একটি ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে। নির্বাচকরা এই মুহূর্তে সিনিয়র খেলোয়াড়দের বিশ্রামে রাখার পক্ষে। ফলে বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান ও শাহিন শাহ আফ্রিদির নাম দল থেকে বাদ পড়ছে।
নির্বাচন কমিটির ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষ দিকে শুরু হতে যাওয়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের জন্য অভিজ্ঞদের তরতাজা রাখতেই এই সিদ্ধান্ত। সেইসঙ্গে তরুণদের পরখ করে নেওয়ারও এটি একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সূত্রটির মতে, “নির্বাচকরা এই মুহূর্তে বাবর, রিজওয়ান কিংবা শাহিনকে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে ফেরানোর ব্যাপারে আগ্রহী নন। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও শাহিনের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত।”
বাবর আজমের অনুপস্থিতিতে পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দেবেন সালমান আলী আগা। অভিজ্ঞতা এবং টিম কম্বিনেশনের ভিত্তিতে তাকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তরুণদের নিয়েই গঠিত হতে যাচ্ছে এই সিরিজের স্কোয়াড। টপ অর্ডারে দেখা যাবে ফখর জামান, সাহিবজাদা ফারহান, সাইম আইয়ুব, এবং মোহাম্মদ হারিস–এর মতো নতুন ও উদীয়মান তারকাদের। এই নামগুলো পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ও সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে আলো ছড়িয়েছেন।
তবে সিনিয়রদের অভাব পূরণে বড় চ্যালেঞ্জ থাকবে এই তরুণদের কাঁধে। বিশেষ করে বাংলাদেশ দলের ঘরের মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা, স্পিনবান্ধব কন্ডিশন ও আগ্রাসী দর্শকসারির সামনে খেলাটা সহজ হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সফর পূর্ববর্তী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ৮ জুলাই করাচিতে একটি সংক্ষিপ্ত তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শুরু হবে। এই ক্যাম্পের জন্য স্কোয়াড ঘোষণা করা হবে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই। যেসব খেলোয়াড় এই দ্বৈত সফরের (বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ) জন্য নির্বাচিত হবেন, তারা ৭ জুলাই করাচিতে একত্রিত হবেন।
পাকিস্তান দলের প্রধান কোচ মাইক হেসন এই মুহূর্তে নিজ দেশ নিউজিল্যান্ডে থাকলেও, ক্যাম্প শুরুর আগে ৫ জুলাইয়ের মধ্যে দেশে ফিরে এসে পুরো প্রস্তুতি তদারকি করবেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের এই কৌশলগত রদবদল আসলে বোঝায়, তারা এখন তরুণদের ওপর ভরসা রেখে ভবিষ্যতের প্রস্তুতি নিতে চাইছে। বাবর-রিজওয়ান-আফ্রিদির মতো তারকাদের না নিয়ে সফর করা মানেই বোর্ড একটি বার্তা দিতে চাইছে—পাকিস্তান ক্রিকেট শুধুই কয়েকজন খেলোয়াড়নির্ভর নয়, বরং প্রতিটি বিভাগেই তৈরি করা হচ্ছে বিকল্পদের।
তবে এই সিদ্ধান্তে পাকিস্তানি ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মধ্যে দ্বিধা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, “সিনিয়রদের বিশ্রাম দেওয়া ঠিক আছে, কিন্তু পুরো স্কোয়াডকেই তাদের ছাড়া তৈরি করা কতটা যৌক্তিক?” অন্যদিকে কেউ বলছেন, “এই ধরনের সুযোগ না দিলে তরুণেরা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা পাবে কীভাবে?”
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে বিসিবি কর্মকর্তারা মনে করছেন, সিনিয়রদের না থাকলেও পাকিস্তান যথেষ্ট প্রতিযোগিতামূলক দল নিয়েই সফরে আসবে। কারণ পিএসএল ও ঘরোয়া লিগগুলোতে নিজেদের প্রমাণ করে আসা অনেক তরুণ এবার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন।
তাদের মতে, এই সিরিজটি দুই দেশের জন্যই হতে যাচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের প্রস্তুতির মঞ্চ। বাংলাদেশ দলও কিছু তরুণ মুখকে সুযোগ দিতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
সব মিলিয়ে, আগামী জুলাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি সিরিজ হতে যাচ্ছে একটি ভিন্ন আবহের ক্রিকেট লড়াই। তারকা শূন্য পাকিস্তান দল কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারে, সেটি দেখার বিষয়। অন্যদিকে, ঘরের মাঠে সিরিজ জয়ের সুবর্ণ সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে এই সিরিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে—উভয় দেশের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য এটি হতে যাচ্ছে নিজেদের প্রমাণ করার এক অনন্য মঞ্চ। এই লড়াই কেবল ব্যাট ও বলের নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রস্তুতির, বিকল্প গড়ে তোলার ও দায়িত্ব নিতে শেখার।
বাংলাবার্তা/এমএইচ