
ছবি: সংগৃহীত
গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রত্যাশা নিয়ে নতুন উদ্যোমে মাঠে নেমেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জুলাই মাসের প্রথম দিন, প্রথম প্রহরে রাজধানী ঢাকার বাংলামোটর মোড়ে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির সূচনা করে দলটি। এক বছর আগে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ এর স্মারক হিসেবেই এই পদযাত্রা আয়োজন বলে জানিয়েছে দলটি।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) ভোরে কর্মসূচির উদ্বোধনী বক্তব্যে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের কাছে শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের দিন নয়, এটি আমাদের আত্মত্যাগ, প্রত্যয় এবং রাষ্ট্র গঠনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক।”
বাংলামোটর মোড় থেকে শুরু হওয়া পদযাত্রায় অংশ নেয় দলের কেন্দ্রীয় নেতা, অঙ্গসংগঠনের কর্মী এবং সাধারণ জনগণ। বিভিন্ন দাবি, স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা কর্মসূচিকে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতীকী মিছিল হিসেবে পরিচালনা করেন।
আখতার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, “এক বছর আগে এই মাসেই আমরা ইতিহাসে একটি চিহ্ন এঁকে দিয়েছিলাম— জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পরিচালিত রাষ্ট্রীয় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। আজ সেই পথচলার এক বছর পূর্তি। অনেক অর্জন যেমন এসেছে, তেমনই কিছু অপূর্ণতা ও চ্যালেঞ্জও আমাদের সামনে রয়েই গেছে।”
তিনি বলেন, “আমরা একটি ন্যায্য, সমানাধিকারভিত্তিক ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়তে চাই। সেটি বাস্তবায়নে ইতিহাসকে স্মরণ করতে হবে, আবার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভবিষ্যতের রূপরেখাও তৈরি করতে হবে। এই দুইয়ের সমন্বয় ছাড়া গঠনমূলক রাজনীতি সম্ভব নয়।”
এনসিপির সদস্য সচিব আরও বলেন, “জুলাই আমাদের কাছে কেবল একটি সময় পর্ব নয়— এটি আত্মপরিচয়ের মাস। আমাদের রাজনৈতিক চেতনা, আমাদের আদর্শ, আমাদের সংগ্রামের আত্মবিশ্বাস এই জুলাই থেকেই পুনর্জন্ম নিয়েছিল। তাই এই পদযাত্রা একটি স্মারক যেমন, তেমনি ভবিষ্যতের জন্যও একটি কর্মসূচি। মূল উদ্দেশ্য জনগণের সঙ্গে সংলাপে যাওয়া, তাদের প্রত্যাশা ও ক্ষোভ জানার সুযোগ তৈরি করা।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা রাজনীতি করি গদি দখলের জন্য নয়— রাষ্ট্রকে ঠিক করার জন্য। আমরা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করি কেবল ভোটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রতিদিনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাম্য, আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামো নির্মাণে।”
পদযাত্রার অংশ হিসেবে বাংলামোটর থেকে শুরু করে শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, প্রেসক্লাব হয়ে সচিবালয় পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল এগিয়ে চলে। প্রতিটি মোড়ে এনসিপির নেতারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া তরুণ কর্মী তানভীর ইসলাম বলেন, “আমরা এই মিছিলে এসেছি কারণ আমরা বিশ্বাস করি— রাজনীতি মানে চেতনা, জনসম্পৃক্ততা, আর সাহস। শুধু ফেসবুকে পোস্ট দিলেই রাষ্ট্র পাল্টে যায় না, রাস্তায় নেমে জনতার কণ্ঠস্বরকে শোনাতে হয়।”
আখতার হোসেন পদযাত্রার শেষে বলেন, “এটি ছিল আমাদের জুলাই মাসজুড়ে চলা কর্মসূচির সূচনা। দেশের বিভিন্ন জেলায় এই ধরণের পদযাত্রা চলবে পুরো মাসজুড়ে। আমরা বিশ্বাস করি— জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংলাপেই আসল রাজনীতির জন্ম হয়।”
তিনি আরও জানান, আগামী ১৫ জুলাই চট্টগ্রামে এবং ২২ জুলাই খুলনায় আরও বৃহৎ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি এই মাসেই দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আইনব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে চারটি ‘জনগণের নীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভাও অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির এই পদযাত্রা কর্মসূচি দলটির রাজনৈতিক দর্শন, সাংগঠনিক সক্রিয়তা এবং নতুন প্রজন্মের সঙ্গে সংযোগ গড়ার স্পষ্ট প্রয়াস হিসেবে দেখা হচ্ছে। এক বছর আগে ঘটে যাওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে রাজনৈতিক প্রেরণায় রূপান্তর করে এনসিপি যে ধারাবাহিক সাংগঠনিক কর্মসূচির মাধ্যমে তার ভিত্তি মজবুত করতে চায়, এই পদযাত্রা সেটিরই একটি প্রতীকী সূচনা।
তবে রাজনীতির বাস্তবতায়, আদর্শিক অবস্থান ও জনসম্পৃক্ততা—এই দুয়ের ভারসাম্য বজায় রেখেই যে দলগুলো টিকে থাকে, সেটিও সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে এনসিপির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ