
ছবি: সংগৃহীত
লিভার আমাদের দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্তকে বিশুদ্ধ করে, হজম প্রক্রিয়া সহজ করে এবং দেহের মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে যদি লিভারে পানি জমতে থাকে, তাহলে এটি শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে। লিভারে পানি জমার সমস্যা (যা অ্যাসাইটিস নামেও পরিচিত) অনেক সময় সঠিক সময়ে শনাক্ত ও চিকিৎসা না করলে গুরুতর জটিলতার জন্ম দেয়। তাই এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো বোঝা অত্যন্ত জরুরি।
লিভারে পানি জমার পেছনে মূলত লিভারের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বা ব্যাধি যেমন সিরোসিস, ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, হেপাটাইটিস বা যকৃতের অন্যান্য জটিলতা দায়ী। এই অবস্থায় লিভারের কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে লিভারে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় এবং লিভারের চারপাশে ফ্লুইড বা পানি জমতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লিভারের কার্যকারিতা কমে যায়, যা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
লিভারে পানি জমা শুরু হলে শরীরে নানা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এগুলোকে দ্রুত বুঝে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত, কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করলে উন্নতি সম্ভব। সাধারণত নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়:
পেট ফোলা ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি: লিভারে পানি জমার ফলে পেটের ভেতর ফ্লুইড জমে পেট ফুলে যায়। এটি হাত দিয়ে স্পর্শ করলে নরম মনে হতে পারে বা মাঝে মাঝে চাপ দিলে পেটের মধ্যে তরল অনুভূত হতে পারে।
বেশি দ্রুত ওজন বৃদ্ধি: পানি জমার কারণে শরীরের ওজন বাড়তে থাকে, যদিও শরীরের অন্য অংশে শারীরিক বৃদ্ধি না হয়।
পেটে চাপ ও ব্যথা: ফ্লুইড জমার কারণে পেটের চারপাশে চাপ অনুভূত হতে পারে এবং মাঝে মাঝে ব্যথাও হতে পারে। এই চাপ বুক ও ডায়াফ্রামের ওপর প্রভাব ফেলে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে।
খিদে কমে যাওয়া ও পেট ভরা অনুভব: অনেক সময় পানির উপস্থিতির কারণে ক্ষুধা কমে যায় এবং অল্প খাওয়াতেই পেট ভরে যায়, যার ফলে শরীরে ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
বমি বমি ভাব ও বুক জ্বালা: লিভারে সমস্যা হলে পাচনতন্ত্রে প্রভাব পড়ে, যার কারণে বমি বমি ভাব, গ্যাস বা বুক জ্বালা হতে পারে।
পায়ের গোড়ালি ও নিচের অংশে ফোলা: পানি জমা শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, বিশেষ করে পায়ের গোড়ালি ও পায়ের নিচের অংশে ফোলা দেখা দেয়।
লিভারে পানি জমা গুরুতর হলে তা জীবনহানির কারণ হতে পারে। শরীরের পানি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় ফুসফুসে পানি জমা, যকৃতের কার্যকারিতায় মারাত্মক ব্যাঘাত, পেটের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে চাপ বৃদ্ধি এবং অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেক সময় অপারেশন বা জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
শরীরে উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত কোনো অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান, বিশেষ করে যারা আগে থেকে লিভারের সমস্যা নিয়ে ভুগছেন তাদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অতিরিক্ত মদ্যপান, ফাস্ট ফুড, ওজন বৃদ্ধি এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন লিভারের জন্য ক্ষতিকর, তাই এ বিষয়গুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
লিভার স্বাস্থ্য রক্ষায় পরিমিত আহার, যথাযথ বিশ্রাম ও ব্যায়াম অপরিহার্য।
লিভারে পানি জমার সমস্যা সময়মতো শনাক্ত ও চিকিৎসা না করলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং বড় ধরনের জটিলতার জন্ম দিতে পারে। তাই শরীরে পেট ফোলা, দ্রুত ওজন বৃদ্ধি, পেটের চাপ বা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও ক্লান্তির মতো লক্ষণ দেখতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রাথমিক সতর্কতা ও চিকিৎসায় এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং জীবনযাত্রার গুণগত মান বজায় রাখা সম্ভব।
বাংলাবার্তা/এমএইচ