
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান জীবনের ব্যস্ততা ও অফিসের দীর্ঘ সময় বসে থাকার কারণে হার্টের নানা সমস্যা বাড়ছে। অনেক সময় শরীরের ক্লান্তি উপেক্ষা করে নিয়মিত শরীরচর্চার অভাবই হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্ট ভালো রাখতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য। শরীরচর্চা মানেই তাড়াহুড়ো করে শরীরকে জোর করা নয়, বরং সঠিক উপায়ে নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি। বিশেষ করে যোগাসন এমন এক মাধ্যম, যা শরীরকে শিথিল করে হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
আমাদের হৃদযন্ত্র ভালোভাবে কাজ করার জন্য রক্তসঞ্চালন সঠিকভাবে হওয়া জরুরি। শরীরের মূল করোনারি ধমনির পাশাপাশি আরও কিছু ধমনি থাকে, যেগুলো সাধারণত কম সক্রিয় থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে এই ধমনিগুলোও সজীব হয় এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। এতে হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং হার্টে চাপ সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই হার্ট সুস্থ রাখতে ব্যায়াম একান্ত প্রয়োজন।
নিম্নলিখিত কয়েকটি যোগাসন হার্টের জন্য খুবই উপকারী এবং নিয়মিত অভ্যাস করলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
১. তাড়াসন (মাউন্টেন পোজ)
সংস্কৃত ভাষায় ‘তাড়’ শব্দের অর্থ পর্বত। এই আসনে দাঁড়িয়ে শরীরকে পর্বতের মতো সোজা ও শক্তিশালী ভঙ্গিতে রাখা হয়।
পায়ের পাতার মধ্যে দুই ইঞ্চি দূরত্ব রেখে ম্যাটে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।
দুই হাত কনুই ভাঁজ করে মাথার পেছনে এনে আঙুলগুলো একত্রিত করে তালু মাথার পেছনে রাখতে হবে।
এরপর শ্বাস নিতে নিতে হাতগুলো মাথার ওপর দিয়ে সোজা করে উপরে তুলুন।
গোড়ালি মাটি থেকে তুলে ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে এই ভঙ্গিতে থাকুন।
পরে হাত নামিয়ে আসন থেকে বেরিয়ে আসুন।
এই আসনটি নিয়মিত করলে শরীরের সামঞ্জস্য বাড়ে, রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং হার্টের চাপ কমে।
২. ভুজাঙ্গাসন (কুম্ভকর্ণাসন)
পিঠের পেশী শক্তিশালী করে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এটি হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
৩. অধোমুখ শবাসন (ডাউনওয়ার্ড ফেসিং ডগ)
হাত ও পায়ের পাতায় ভর দিয়ে পিঠকে প্রসারিত করা এই আসনে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদপিণ্ডে রক্ত সঠিকভাবে প্রবাহিত হয়।
হাত ও হাঁটু মাটিতে রাখুন, হাতের তালু পুরোপুরি মাটিতে ছোঁয়া থাকবে।
পিঠকে উপরের দিকে তুলে নিন।
মাথা ধীরে ধীরে মাটির দিকে ঝুঁকিয়ে গভীর শ্বাস নিন।
২০ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং তিনবার এই অভ্যাস করুন।
এই আসন উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তাও কমায়, হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা উন্নত করে।
চিকিৎসকরা বলছেন, হৃদরোগ প্রতিরোধে ব্যায়াম হলো সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এর মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং হৃদপিণ্ডের মাংসপেশী শক্তিশালী হয়। এছাড়া নিয়মিত যোগাসন করলে স্ট্রেস কমে যা হৃদরোগের অন্যতম ঝুঁকি। তবে ব্যায়াম শুরু করার আগে নিজের স্বাস্থ্যের অবস্থা বুঝে ধীরে ধীরে ও নিয়মিত অভ্যাস শুরু করা উচিত।
ব্যায়ামের সময় শরীরের কোনও অস্বস্তি বা ব্যথা হলে তা উপেক্ষা করবেন না।
যাদের হৃদরোগের সমস্যা আছে, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম শুরু করবেন।
প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
হার্ট সুস্থ রাখা বর্তমান সময়ের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সঠিক নিয়মে ও ধারাবাহিকভাবে যোগাসন ও শরীরচর্চা করলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। তাড়াসন, অধোমুখ শবাসন সহ বিভিন্ন যোগাসন হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে সুস্থ জীবন নিশ্চিত করে। তাই সময় করে নিজের শরীরকে সক্রিয় রাখুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং হার্টকে সুস্থ রাখুন।
হার্ট ভালো থাকলে জীবনও সুন্দর হয়, তাই নিজের যত্ন নিতে কখনো গাফিলতি করবেন না।
বাংলাবার্তা/এমএইচ