
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন সময়ের সূচনা হতে যাচ্ছে শ্রীলংকা সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে। দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার—মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম—যারা সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন, তাদের অভাবেই এবার তরুণ ও মাঝারি বয়সী খেলোয়াড়দের নিয়ে এক নতুন দল গঠন করা হয়েছে। সোমবার প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন ঘোষণা করেন, নতুন এই ওয়ানডে দলে কারা জায়গা পেয়েছেন এবং কারা আছেন না।
গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর অবসরে গেছেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম, যারা দীর্ঘদিন বাংলাদেশ দলে অভিজ্ঞতা ও স্থিতিশীলতা যোগ করেছেন। তাদের অভাবে এবারের সিরিজটি অনেকটা তরুণ ও নবীনদের জন্য নিজের সেরাটা দেখানোর সুযোগ হয়ে উঠবে। নির্বাচক জানান, দলের পরিকল্পনা এখন তরুণদের দক্ষতা বাড়ানো এবং ব্যাটিং লাইনআপে নতুন প্রাণ সঞ্চার করা।
তিনি বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করছি ভালো স্ট্রাইক রেটের সঙ্গে প্রয়োগটা ঠিক রেখে যেন ব্যাটিং হয়। এই জায়গায় একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে তানজিদ ও পারভেজ।” তরুণ ব্যাটসম্যানরা এখনো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের দাপট দেখাতে পারেননি, তবে ইতোমধ্যে নিজেরা স্ট্রাইক রেট ভালো রাখতে শুরু করেছেন।
নির্বাচক আরও বলেন, “বিজয় (এনামুল হক) ব্যর্থ হলেও সিস্টেমের মধ্যে থাকবে। জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসানরাও একটা পদ্ধতির মধ্যে থাকবে।” এর মানে হলো, কোনো খেলোয়াড়ের ব্যর্থতা তাকে দলে থেকে যায় না, বরং তাদের উন্নতির জন্য সুযোগ দেওয়া হবে। তবে খেলোয়াড়দের নিজেরাও সৎভাবে নিজেদের ভুল বুঝে তা শুধরে নেওয়ার দায়বদ্ধতা নিতে হবে।
“অভিজ্ঞতা কেনা যায় না। ভুলত্রুটি শুধরে ফেরাটাই আসল,” যোগ করেন গাজী আশরাফ।
আলোচিত এক প্রশ্ন ছিল, কেন বাঁহাতি তরুণ স্পিনার রকিবুল হাসান ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফরম্যান্স করার পরও জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছেন না। এর জবাবে প্রধান নির্বাচক বলেন, “আমরা চাই রকিবুল আরও শক্তভাবে দলে আসুক।”
অন্যদিকে অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেনের অনুপস্থিতি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। গাজী আশরাফ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “মিরাজ থাকা পর্যন্ত মোসাদ্দেকের দলে জায়গা নেই।” অর্থাৎ, বর্তমান বাঁহাতি স্পিন অলরাউন্ডার মিরাজ থাকার কারণে মোসাদ্দেককে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।
বর্তমানে বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে জায়গা পাওয়া তরুণ ও নবীন খেলোয়াড়রা দলে প্রবল প্রতিযোগিতা তৈরি করেছেন। যেমন—তানজিদ, পারভেজ, নাঈম, বিজয়, জাকির হাসান ও মাহমুদুল হাসান। তারা এখন জাতীয় দলের ব্যাটিং ও বোলিং বিভাগে নতুন প্রাণ সঞ্চার করছে।
তবে এই তরুণদের সামনে রয়েছে চ্যালেঞ্জ, কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মানে চাপ ও দমনশীলতা বেশি। নির্বাচকরা তাদের উন্নয়নে মনোযোগী থাকবেন। ভুল হলে সঠিক সমর্থন ও পরামর্শ দেয়া হবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন নতুন দিগন্তে প্রবেশ করেছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় আসরের পর অবসর নেয়া অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের জায়গা নিচ্ছে নতুন প্রজন্ম। তরুণরা দলে সুযোগ পেয়েছে নিজেকে প্রমাণ করার। তবে নির্বাচকরা বলছেন, উন্নতির জন্য ধৈর্য্য ধরে কাজ করতে হবে এবং ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
এদিকে, নির্বাচকদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে, মিরাজের বিদ্যমান অবস্থানে অলরাউন্ডার মোসাদ্দেকের সুযোগ আপাতত নেই। এই ঘোষণার পর ক্রিকেট মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে।
আগামী শ্রীলংকা সফর বাংলাদেশ দলের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য একটি বড় মঞ্চ হতে যাচ্ছে, যেখানে তারা নিজেদের দক্ষতা ও মানসিকতা প্রমাণ করে দলে নিজের জায়গা মজবুত করতে চাইবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ