
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে আবারও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও দেশের গ্রস (মোট) রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৮২৩ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২৬ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলারে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নির্ধারিত হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৭৫০ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলারে। সোমবার (২৩ জুন) রাতে এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. আরিফ হোসেন খান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ আপডেট অনুসারে, রিজার্ভের এই নতুন পরিমাণ ২৩ জুন পর্যন্ত হিসাব করা হয়েছে। এর আগে চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৬ হাজার ১৪৯ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন ডলার এবং বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০ হাজার ৮৬৩ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ডলার। সে তুলনায় গ্রস রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৬৭৩ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলার এবং নিট রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৮৮৭ মিলিয়ন ডলার।
রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড় হওয়ার সিদ্ধান্ত। সোমবার (২৩ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফ বোর্ডের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যার ফলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পাচ্ছে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, এই অর্থ খুব দ্রুত দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যুক্ত হচ্ছে, যার প্রভাব ইতোমধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে রিজার্ভের হালনাগাদ চিত্রে।
রিজার্ভ বৃদ্ধিতে আরও একটি বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। চলতি জুন মাসের প্রথম ১৮ দিনেই প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন প্রায় ১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার, যা গড়ে প্রতিদিন ১০ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাস শেষ হতে না হতেই রেমিট্যান্স প্রবাহ গত কয়েক মাসের তুলনায় স্পষ্টভাবে ঊর্ধ্বমুখী। একই সঙ্গে কিছু কিছু খাতে রপ্তানি আয়ও বাড়ছে, যা সামগ্রিকভাবে রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বলতে সাধারণত বোঝায় গ্রস রিজার্ভ, অর্থাৎ সরকারের ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে থাকা মোট বৈদেশিক মুদ্রা। তবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিট রিজার্ভ বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যা হিসাব করা হয় মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় (যেমন—সোয়াপ, ঋণ, লেটার অব ক্রেডিট ইত্যাদি) বাদ দিয়ে। আইএমএফের বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে এই নিট রিজার্ভ হিসাব করা হয়, এবং এই পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রকৃত বৈদেশিক অর্থমজুত সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “রিজার্ভ বাড়ার পেছনে বহুমুখী কারণ রয়েছে। বিশেষ করে আইএমএফের অর্থ ছাড় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। আমরা আশা করছি, এই ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিতে আরও স্থিতিশীলতা আসবে।”
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়লে একদিকে যেমন ডলারের ওপর চাপ কমে, অন্যদিকে আমদানি ব্যয় মেটানো এবং সরকারি ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আমদানির ক্ষেত্রে ডলার সংকটের যে প্রতিকূলতা তৈরি হয়েছিল, তা কিছুটা হলেও কমবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে টাকা ও ডলারের বিনিময় হার ব্যবস্থাপনায় স্বস্তি ফিরে আসবে।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই রিজার্ভ বৃদ্ধি সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা। তবে এই ধারা টিকিয়ে রাখতে হলে কাঠামোগত অর্থনৈতিক সংস্কার, রপ্তানি বৈচিত্র্য বৃদ্ধি, এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণ উৎসাহিত করতে হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ