ছবি: সংগৃহীত
স্বাধীনতার পর প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক ধরে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এক সময়ের ‘দারিদ্র্য, খাদ্য ঘাটতি, বৈরী প্রতিবেশসহ নানা সমস্যা নিয়ে শুরু করা দেশ আজ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রেমিট্যান্স ও রফতানিতে অনেকটা এগিয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু নতুন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জও দেখা দিয়েছে।
স্বাধীনতার পর মাত্র ১৮ ডলার নিয়ে যাত্রা শুরু বাংলাদেশের। চুয়ান্ন বছর আগে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ে সবার ছিল নানামুখী সংশয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে বলেছিলেন ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’। তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এগিয়ে চলছে দেশ। তৈরি হয়েছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা, বেড়েছে দেশের রিজার্ভ, রফতানি ও প্রবাসী আয়।
যেভাবে গড়ে উঠেছে উদ্যোক্তা শ্রেণি
১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাসে দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। তখন পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন প্রয়াত অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম, যার নেতৃত্বে এই পরিকল্পনা তৈরি হয়েছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে দেশে মাত্র ৩১৩টি কারখানা কার্যক্রম শুরু করতে সক্ষম হয়। নব্বইয়ের দশকের আগপর্যন্ত শিল্পখাত তেমনভাবে গড়ে উঠতে পারেনি।
আরও পড়ুন: উন্নয়ন ব্যয় কাটছাঁটে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ কমছে, স্থবিরতায় পড়বে অর্থনীতি!
তবে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে অর্থনীতি ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হয়। সরকারের নীতি ও সহায়তা উদ্যোগের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে একটি উদ্যোক্তা শ্রেণি গড়ে ওঠে। বিভিন্ন প্রণোদনা যেমন: কর অবকাশ, ব্যাংক ঋণ সহজলভ্য করা এবং রফতানিতে নগদ সহায়তা নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে উৎসাহ জুগিয়েছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন শিল্পকারখানা স্থাপিত হয়। বিশেষ করে পোশাক শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটে। পাশাপাশি রড-সিমেন্ট, ওষুধ এবং ভোগ্যপণ্য খাতেও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ একের পর এক আসতে থাকে।
উদ্যোক্তা শ্রেণি গড়ে ওঠার ফলে লাখ লাখ অদক্ষ ও আধা-দক্ষ নারী ও পুরুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। গত তিন দশকে মোবাইল ফোন, পরিবহন, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সেবা খাতেও উল্লেখযোগ্য বিকাশ দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৯ সালের কলকারখানা সম্পর্কিত জরিপ অনুযায়ী, সারা দেশে মোট ৪৬ হাজার ২৯১টি কলকারখানা রয়েছে।
যেভাবে গঠন হয়েছিল দেশের রিজার্ভ
২০২১ সালে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের রিজার্ভ গড়ে ওঠার গল্প শুনিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ শুরু করেছিল মাত্র ১৮ ডলার দিয়ে। পাকিস্তানিরা চলে যাওয়ার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঢাকা অফিসে রেখে গিয়েছিল ওই ১৮ ডলার। ওই সংকটের সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত। একইসঙ্গে সাহায্য করেছিল সুইডেন ও কানাডা।
এই দুই দেশ বাংলাদেশের রিজার্ভ সমৃদ্ধ করতে দিয়েছিল নগদ ডলার। আর টাকা ছাপানোর যোগ্যতার পরিমাপক হিসেবে দিয়েছিল স্বর্ণ। বর্তমান অবস্থানে রিজার্ভকে টেনে আনতে রেমিট্যান্স ও পোশাক রফতানিকে ক্রেডিট দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম।
সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘দুটি বিষয় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আজকের অবস্থানে আসতে সাহায্য করেছে। একটি হচ্ছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া লাখ লাখ বাংলাদেশি যে বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশের জন্য পাঠিয়েছেন, সেটা অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। আরেকটি হলো তৈরি পোশাক শিল্প। বাংলাদেশ এখন চীনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক। এটাও এক বিরাট সাফল্য। বাংলাদেশে যে একদিন এরকম কিছু ঘটবে, এটা তো আমরা কল্পনাই করতে পারিনি।’
বর্তমানে দেশের রিজার্ভ কত?
বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশের রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্যানুযায়ী, ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ৩১৮৯০ দশমিক ০৭ মিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২৭২২৪ দশমিক ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রতিবছরই বাড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ
স্বাধীনতার পর থেকে বিদেশে গিয়ে কাজ করা বাংলাদেশিরা শুধু দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহই নিশ্চিত করেননি; বরং রেমিট্যান্স, বিনিয়োগ, মানবসম্পদ ও জ্ঞানভিত্তিক অবদানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলেছেন।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ১৯৭৬-২০২৩ সাল পর্যন্ত বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ ৭৫ হাজার ৪৮৭ জন বাংলাদেশির। এ সময়কালে তারা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২৯৭১৩৮.১৬ মিলিয়ন ডলার।
বিগত কয়েক বছরে দেশের রেমিট্যান্সে দেখা গেছে ঊর্ধ্বমুখী প্রবাণতা। বিশেষ করে ২০২৪ সালের আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রেমিট্যান্স প্রবাহে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৪১৪৫২.৩০ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান উৎস এবং মোট রিজার্ভের বড় অংশকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।
মাথাপিছু আয় বেড়েছে
স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের বার্ষিক গড় মাথাপিছু আয় ছিল ৯৪ মার্কিন ডলারের সমান। সবশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২০ ডলার। তাতে দেখা যায়, ৫৪ বছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রায় ৩০ গুণ।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি
১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ছিল ৪ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাময়িক হিসাব অনুযায়ী চলতি মূল্যে জিডিপির আকার ৫৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গত পাঁচ দশকে দেশের জিডিপির আকার বেড়েছে বহুগুণ। আর বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতি।
তৈরি পোশাক রফতানি
বাংলাদেশ থেকে প্রথম তৈরি পোশাক রফতানি করে রিয়াজ গার্মেন্টস। ১৯৭৮ সালের ২৮ জুলাই মোহাম্মদ রিয়াজউদ্দিন প্রথমবারের মতো ফ্রান্সে মাত্র ১০ হাজার পিস শার্ট রফতানি করেন। ক্রেতা ছিলেন ফরাসি হ্যান্ডলার ফ্রঁস। চালানের মোট মূল্য ফরাসি মুদ্রায় ছিল মাত্র ১৩ মিলিয়ন ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা।
আর বর্তমানে তৈরি পোশাক বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল শিল্প খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বর্তমানে দেশের মোট রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ আসে এই খাত থেকে। তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বিদেশে পোশাক রফতানি করে প্রতিবছর যেমন বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থান হচ্ছে লাখ লাখ মানুষের।
এলডিসি উত্তরণের পথে বাংলাদেশ
জাতিসংঘ সদস্যদেশগুলোকে উন্নয়নশীল ও উন্নত-এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করে। তাদের বিবেচনায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হলেও এখন স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকায় আছে। আগামী বছরের ২৪ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের কথা রয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) উন্নয়ন নীতিমালা বিষয়ক কমিটির (সিডিপি) পর্যালোচনায়, ২০১৮ ও ২০২১ সালে দুই দফায় এলডিসি উত্তরণের সব শর্ত পূরণ করে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
তবে এখনই এলডিসি উত্তরণের পক্ষে নন ব্যবসায়ীরা। বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘সাবলীলভাবে এলডিসি উত্তরণের জন্য আরও ৫ থেকে ৬ বছর সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের কাছে। সুষ্ঠু ট্রানজিশনের জন্য যেভাবে বন্দর অবকাঠামো প্রস্তুত থাকা দরকার, বাস্তবে তা এখনও হয়নি। ইউরোপের সবচেয়ে বড় বাজার জিএসপি প্লাসে প্রবেশ করতে হলে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ আরও শক্তিশালী করতে হবে। কিন্তু এই খাতে আমাদের প্রয়োজনীয় ইউটিলিটি লাইন নেই।’
এদিকে, অর্থনীতিবিদদের অনেকেই আগামী বছরেই এলডিসি উত্তরণ চান। তাদের মতে, উত্তরণের ফলে উজ্জ্বল হবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি, যা একদিকে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ করবে, অন্যদিকে তৈরি পোশাকনির্ভর রফতানির পাশাপাশি বহুমুখী পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে। অর্থনীতি বিশ্লেষক মো. মাজেদুল হক বলেন, ‘দেশের প্রায় সব সূচক এখন নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তাই আগে আমাদের মর্যাদা বাড়ানো জরুরি। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলে অর্থনীতি বাধ্য হবে বহুমুখীকরণে, যা দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিজয়ের পর বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে; এটি দেশের মানুষের সম্মিলিত সাফল্য। খুব দ্রুতই দেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হবে। তবে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ বহু বিশেষ সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। তাই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এখন থেকেই প্রস্তুতি জরুরি।
দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন দিকে?
রফতানিমুখী কর্মকাণ্ড, রেমিট্যান্স নির্ভরতা এবং ধীরে ধীরে বহুমুখী অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলে ও নানা অনিশ্চয়তা ও সম্ভাবনা নিয়ে এভাবেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। তবে এই অগ্রগতি ঠিক কতটুকু? বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশ এখনও নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ৫৪ বছরে এসেও বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুমাত্রিক ও কাঠামোগত সংকটের মুখে। কাঙ্ক্ষিত সংস্কার না হলে বা বিলম্বিত হলে দেশের ঋণ নির্ভরতা আরও বাড়বে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমবে এবং বৈষম্য বাড়বে।
অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, ৫৪ বছরে বাংলাদেশ অসামান্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। শিল্প, কৃষি ও সেবা খাতের অভাবনীয় উন্নতিতে অর্থনীতির আকার বেড়েছে। নারী শিক্ষায়ও দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক দূর এগিয়েছে বাংলাদেশ। নারী উদ্যোক্তাও তৈরি হয়েছে অনেক।
সব মিলিয়ে ৫৪ বছরে অর্জন কম না হলেও, এই অর্জন আরও বেশি সম্ভব হতো বলে মনে করেন ড. মাহফুজ কবির। তবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতা, মূল্যস্ফীতি দুর্নীতি-অস্বচ্ছতাসহ নানা কারণে এই অর্জন খুব বেশি ত্বরান্বিত হতে পারেনি বলে মনে করেন তিনি।
ড. কবির বলেন, বর্তমানে নারীশিক্ষায় নানা ধরনের বাধা আসছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন জায়গায় বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সামনে এগুলো উপেক্ষা করেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সম্প্রতি সিপিডির এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘অর্থনীতি কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে–এটি যেমন সত্যি; তেমনি সত্যি হলো, এটি আরও খারাপ হতে পারত। অর্থনীতির সামনে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের সংকেত আছে। তবে নেতিবাচক দিকটি বেশি ভারী। রেমিট্যান্সপ্রবাহ নতুন উচ্চতায়, যা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারকে সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে। তবে অবৈধ আর্থিক প্রবাহ রোধ, আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজেট ঘাটতি অর্থনীতিতে চাপ বাড়ার দিকে ইঙ্গিত করছে। রফতানি প্রবৃদ্ধি ধীর, বিশেষত ইউরোপনির্ভর বাজারে প্রতিযোগিতা কমছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ সম্প্রতি সিপিডির এক অনুষ্ঠানে বলেন, লুটপাটভিত্তিক অর্থনীতি ভেঙে ক্ষমতার ভারসাম্য না আনলে কোনো উন্নয়ন টেকসই হবে না। দেশ স্বাধীনের পর এ পর্যন্ত যেভাবে সম্পদ এক হাত থেকে আরেক হাতে স্থানান্তরিত হয়েছে, তাতে উৎপাদনভিত্তিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যতদিন সম্পদ পুনর্বণ্টনের চক্র শেষ না হবে, টেকসই উন্নয়ন অধরাই থাকবে। নানান নীতি, পরিকল্পনা ও সংস্কার পদক্ষেপ নেয়া হলেও কোনোটিই টেকসই হয়নি। কারণ, ক্ষমতার অসম বণ্টন, আর্থিক সুযোগের দখল ও সামাজিক-রাজনৈতিক কাঠামোর কেন্দ্রীভবন অর্থনীতিকে আরও ভঙ্গুর করেছে। বিনিয়োগ পরিবেশ মন্থর ও উদ্দীপনাহীন। তৈরি পোশাক ও রেমিট্যান্স ছাড়া অন্য কোনো সম্ভাবনাময় খাত এখনও জাতীয় পর্যায়ে উঠতে পারেনি।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ এখন রাজস্ব সংকট, ঋণ পরিশোধের চাপ ও নীতিগত দুর্বলতায় এক ঝুঁকিপূর্ণ পথে হাঁটছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দেশ ঋণের ফাঁদে পড়বে।
নির্বাচিত সরকারের কাছে প্রত্যাশা
দেশের ভবিষ্যৎ এখন আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী সরকারের নীতি-সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন নির্ভর করছে নীতিগত সংস্কার কতটুকু ধারাবাহিকভাবে এগোবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া কতটা বাধাহীনভাবে সম্পন্ন হবে–তার ওপর।
ড. মাহফুজ কবির বলেন, দেশের নির্বাচনের দিকে সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। নতুন নির্বাচিত সরকারের কাছে সবার প্রত্যাশা অনেক। দেশ সংস্কারে ও উন্নতিতে তাদেরকে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে, যেখানে মানুষে মানুষে কোনো বৈষম্য থাকবে না।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, দেশের উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে নীতিমালা বাস্তবায়ন, সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজয়ের ৫৪ বছরে এসে জনগণের প্রত্যাশা–আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত নতুন সরকার এই গুণগত পরিবর্তনগুলোর মাধ্যমে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশকে সঠিক পথে রাখতে জনগণকেও নীতিনির্ধারকদের ওপর ইতিবাচক চাপ বজায় রাখতে হবে।’
এ ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে হলে বাজার বৈচিত্র্যকরণ ও পণ্য বৈচিত্র্যকরণ করার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন তিনি। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন বাজারে প্রবেশ করতে পারলে রফতানি আয়ের পরিধি বাড়বে পাশাপাশি শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তি বাড়িয়ে রেমিট্যান্স বাড়ানোর প্রতি জোর দিতে হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



