ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম বন্দরের সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপো আগামীকাল থেকে রপ্তানি পণ্য ও খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং একযোগে বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান চার্জে কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়—এমন দাবি জানিয়ে প্রতিটি ডিপো আলাদাভাবে তাদের গ্রাহকদের জানিয়েছে, ১১ ডিসেম্বর থেকে রপ্তানি পণ্য বোঝাই ও খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং সেবা তারা দেবে না। চার্জ সমন্বয় কার্যকর না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বলে ডিপোগুলোর দাবি। এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য ও চট্টগ্রাম বন্দর কার্যক্রমে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সহায়ক হিসেবে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা ১৯টি আইসিডিতে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও সার্বিক গতিশীলতা এসব আইসিডির কার্যক্রমের ওপর বড়ভাবে নির্ভরশীল। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে যেখানে প্রায় ৬০ হাজার টিইইউএস কনটেইনার ধারণক্ষমতা আছে, সেখানে বেসরকারি আইসিডিগুলোর সম্মিলিত ধারণক্ষমতা এক লাখ ছয় হাজার টিইইউএস। এসব আইসিডিতে বছরে প্রায় ২২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়। রপ্তানি পণ্যের সব কনটেইনার এখানেই প্রস্তুত করে বন্দরে পাঠানো হয়; একইভাবে বিদেশ থেকে ফেরত আসা খালি কনটেইনারও বন্দর থেকে এনে আইসিডিগুলোতে রাখা হয়।
বেসরকারি আইসিডি মালিকদের সংগঠন বিকডা গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯টি ডিপোতে বিভিন্ন সেবার চার্জ সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের দাবি, এ সমন্বয়ের ফলে গড়ে প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়, যার বিরুদ্ধে তাঁরা আপত্তি জানান। তাঁদের অভিযোগ ছিল—ট্যারিফ কমিটির মতামত উপেক্ষা করে বিকডা একতরফাভাবে কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ বাড়াতে চেয়েছিল, যা অচলাবস্থা তৈরি করে। পরে বিষয়টি আদালতে ওঠে এবং মামলার কারণে বিকডা নতুন চার্জ কার্যকর করতে পারেনি।
বেসরকারি ডিপোর একজন কর্মকর্তা বলেন, চার্জ বৃদ্ধি না হওয়ায় ডিপো মালিকদের খরচ পোষাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় তাদের পক্ষে ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে উঠেছে। ফলে ডিপো মালিকেরা আগামীকাল ১১ ডিসেম্বর থেকে বন্দর থেকে কোনো খালি কন্টেনার ডিপোতে নেবেন না, করবেন না কোনো খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং। একইসাথে ডিপোতে এনে রপ্তানি পণ্য কন্টেনারজাত করে বন্দরে পাঠানোর কাজও তারা করবেন না। ফলে খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং এবং রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে না।
বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার গত রাতে আজাদীকে বলেন, এটা বিকডার কোনো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নয়। বিকডা সাংগঠনিকভাবে এটার সাথে জড়িত নয়। তবে বেসরকারি ডিপো মালিকেরা আলাদা আলাদাভাবে তাদের অপারগতার কথা তাদের গ্রাহকদের জানিয়ে দিয়েছেন। ১১ ডিসেম্বর থেকে তাদের পক্ষে আর রপ্তানি পণ্য এবং খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে না বলেও গ্রাহকদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এই ব্যাপারে শিপিং লাইন্সগুলোকেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি ১৯টি ডিপো রপ্তানি পণ্য ও খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং বন্ধ করে দিলে দেশের রপ্তানি কার্যক্রম এবং চট্টগ্রাম বন্দর মারাত্মক সংকটে পড়বে। বর্তমানে দেশের শতভাগ রপ্তানি পণ্যই এসব ডিপোর মাধ্যমে হ্যান্ডলিং হয়। ডিপোগুলো রপ্তানি পণ্য গ্রহণ করে কনটেইনারে ভরে বন্দরে পাঠাতে না পারলে রপ্তানি কার্যত থমকে যাবে। একইভাবে বন্দর থেকে খালি কনটেইনার ডিপোতে সরানো সম্ভব না হলে চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনারজটে আক্রান্ত হবে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত হয়েছেন, তবে বিকডা এখনো তাদের কাছে কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠায়নি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



