
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী প্রতীক ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের পথে হাঁটছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধনের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহারযোগ্য প্রতীকের তালিকায় ‘শাপলা’ ও ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। এতে করে একদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর জন্য শাপলা প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পথ সুগম হচ্ছে, অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ দলীয় প্রতীক হিসেবে ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরে পেতে পারে—এমন আলোচনা চলছে কমিশন সচিবালয়ে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সূত্র অনুযায়ী, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার সংশোধন শেষে ইসির সংরক্ষিত প্রতীকের সংখ্যা ১১৫টিতে উন্নীত হবে। বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সংরক্ষিত প্রতীকের সংখ্যা ৪৪টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ২৫টি। প্রস্তাবিত সংশোধনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি প্রতীকও জাতীয় নির্বাচনের জন্য সংযুক্ত করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া শেষ হলে দলীয় প্রতীক বরাদ্দে বৈচিত্র্য আসবে এবং নতুন দলগুলোর অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়বে।
গত রোববার নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারা প্রস্তাবিত তিনটি প্রতীকের মধ্যে ‘শাপলা’কে প্রথম পছন্দ হিসেবে রেখেছে। তবে শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হওয়ায় রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে এটি অনুমোদনযোগ্য কিনা, তা নিয়ে কমিশনের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছিল।
নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, কমিশন এখন শাপলা প্রতীকটি নতুনভাবে সংরক্ষিত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিচ্ছে। এতে করে আইনি বা প্রশাসনিক বাধা না থাকলে এবং এনসিপি নিবন্ধনের অন্যান্য শর্ত পূরণ করতে পারলে দলটি এই প্রতীক পেয়ে যেতে পারে।
আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয় উচ্চ আদালতের রায়ে। সম্প্রতি সেই রায়ের আলোকে ৪ জুন নির্বাচন কমিশন সভায় দলের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত রূপরেখা এখনও চূড়ান্ত না হলেও, সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকটি বর্তমানে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার তালিকায় না থাকায় দলটি নিবন্ধন পাচ্ছে না। এজন্য ‘দাঁড়িপাল্লা’কে তালিকাভুক্ত করে পুরোপুরি প্রতীকসহ নিবন্ধন দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
তবে ইসি সূত্র জানিয়েছে, চাইলে প্রতীক ছাড়াও জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়া সম্ভব। কিন্তু জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা একবারে প্রতীকসহ নিবন্ধন চান, যার ফলে কমিশনকে বিধিমালার সংশোধনে যেতে হচ্ছে।
ইসির একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, “জামায়াতের নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন প্রতীক বিষয়টি একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, যা পুরো করতে কিছুটা সময় লাগবে।”
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাও প্রতিবছর বাড়ছে, বিশেষ করে ইভিএমভিত্তিক ভোটগ্রহণের কারণে প্রতীকের ভিন্নতা প্রয়োজন হচ্ছে। এজন্যই নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক একই তফসিলে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বর্তমানে রাজনৈতিক দলের জন্য ৪৪টি প্রতীক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ২৫টি প্রতীক সংরক্ষিত রয়েছে, যা মিলিয়ে ৬৯টি। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে ইসি ১১৫টি প্রতীক সংরক্ষণের পরিকল্পনা করছে, যাতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতীক বিভ্রান্তি কমে এবং অংশগ্রহণে কোনো বাধা না থাকে।
এই প্রতীক সংশোধনের উদ্যোগ ইতোমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়া নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও জামায়াতকে যদি প্রতীকসহ নির্বাচন করার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে তা রাজনৈতিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে, কমিশনের একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, “বর্তমান নির্বাচন কমিশন এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করতে চায়, যেখানে কোনো দল অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত না হয় এবং আইনি ও সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে প্রতীক বিতরণ হয়।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ