
ছবি: সংগৃহীত
আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীনের নেতৃত্বে চলমান উদ্যোগকে অত্যন্ত ইতিবাচক ও সময়োপযোগী হিসেবে মূল্যায়ন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে চীনের গৃহীত কৌশলগত ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ শুধু দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নয়, গোটা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই উদ্যোগ আরও বিস্তৃত হয়ে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা ও অংশগ্রহণমূলক কাঠামোতে রূপ নেবে—এমন প্রত্যাশা আমাদের।”
বিএনপির এই বক্তব্য এসেছে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অবস্থিত ‘পিপলস গ্রেট হল’-এ অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে, যেখানে বিএনপির একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল এবং চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না (CPC)-এর কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।
বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় সোমবার, ২৩ জুন, বাংলাদেশ সময় দুপুরের পরপরই।
বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সিপিসির পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য এবং ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস স্ট্যান্ডিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংঝং। শুরুতেই বিএনপির প্রতিনিধি দলকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান লি হংঝং ও তার সহকর্মীরা।
চীনের পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়, “সিপিসি বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। আমরা বিশ্বাস করি, বিএনপির সঙ্গে এই সম্পর্ক কেবল রাজনৈতিক পর্যায়ে নয়, উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং জনগণের মধ্যে সৌহার্দ্য বৃদ্ধির নতুন সুযোগ তৈরি করবে।”
লি হংঝং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, “তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা দুই দলের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে।”
বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল এবং চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার।
এই সফরকে কেন্দ্র করে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান সাংবাদিকদের বলেন, “এটি কেবল এক বৈঠক নয়, এটি হচ্ছে দুই দেশের রাজনৈতিক সংলাপের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সূচনা।”
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড–এর সদর দপ্তর পরিদর্শন করে বিএনপি প্রতিনিধি দল। এখানে তারা চীনের অবকাঠামোগত অগ্রগতি, রেল প্রযুক্তির আধুনিকীকরণ এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর আওতায় বাংলাদেশের সম্ভাব্য অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করেন।
বিএনপি নেতারা বলেন, “চীন আজ যে অবকাঠামো বিপ্লব ঘটিয়েছে, বাংলাদেশ সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনায় নতুন মাত্রা যুক্ত করতে পারে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সফর এমন সময়ে হচ্ছে যখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ভারসাম্য এক চূড়ান্ত পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে। বিএনপি যে কেবল রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় তাই নয়, বরং আন্তর্জাতিক পরিসরেও নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার দাবিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়—এই সফরের মাধ্যমে তা স্পষ্ট হলো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের সঙ্গে কৌশলগত রাজনৈতিক সংলাপ এবং উন্নয়ন সহযোগিতার বার্তা দিয়ে বিএনপি যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-কেন্দ্রিক কূটনীতির বাইরে বিকল্প যোগাযোগ কাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ