
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস হয়নি—শুধু কয়েক মাসের জন্য কর্মসূচিটি পিছিয়ে গেছে বলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রাথমিক মূল্যায়নে উঠে এসেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র দাবি ও ঘোষণা সত্ত্বেও বাস্তব পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন বলে জানাচ্ছে রয়টার্স ও ওয়াশিংটন পোস্ট।
ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইরান-ইসরাইলের মধ্যে একটি অনিশ্চিত ও ‘নড়বড়ে’ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই, যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের তিনটি কৌশলগত পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের বোমা ব্যবহার করে চালানো এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে।
তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (DIA) ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এসব দাবির সত্যতা মেলেনি। রিপোর্টে বলা হয়, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত প্রধান সেন্ট্রিফিউজগুলো ধ্বংস হয়নি এবং পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর গভীরে থাকা কোর অবকাঠামোগুলোর উপর বিশেষ ক্ষতি হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের অধিকাংশ পারমাণবিক কর্মসূচি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ ও বাঙ্কারে গড়ে তোলা, যা সহজে বিমান হামলায় ধ্বংস করা সম্ভব নয়। হামলায় কয়েকটি প্রবেশপথ ধ্বংস হয়েছে বটে, তবে মূল চেম্বারগুলো অক্ষত রয়ে গেছে।
একজন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, "পারমাণবিক কর্মসূচির মূল প্রক্রিয়া — সেন্ট্রিফিউজ, কন্টেইনমেন্ট এবং কন্ট্রোল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অক্ষত রয়েছে। হামলায় শুধুমাত্র সময়ের ক্ষতি হয়েছে — গঠনগতভাবে এগুলোকে পুনরায় সচল করতে মাত্র ৬০ থেকে ৯০ দিন লাগবে।"
তেহরান এক বিবৃতিতে জানায়, তারা সবসময়ই তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে বেসামরিক ও শান্তিপূর্ণ শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে চালিয়ে আসছে। সরকার এই হামলাকে ‘অবৈধ আগ্রাসন’ ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হামলার পর এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, "ইরানের পারমাণবিক স্বপ্ন আজ ধ্বংস হয়েছে। আমরা বিশ্বকে একটি বড় বিপদ থেকে মুক্ত করেছি।"
কিন্তু জাতিসংঘে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত এক গোয়েন্দা সারাংশেই বলা হয়, "হামলায় সাময়িক ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি।"
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চাপে থাকা ট্রাম্প তার আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের জন্য ইরান ইস্যুকে ব্যবহার করছেন। একটি শক্তিশালী বিজয়ের ছবি দেখিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক মহলে ও নিজ দেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে নিজের অবস্থান মজবুত করতে চাইছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ব্যর্থ হামলা ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমকে বন্ধ করতে না পারলেও, এটি পশ্চিমাদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ আলোচনায় তেহরানের অবস্থান আরও জোরালো করতে পারে। একইসঙ্গে ইসরাইলের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক ও আঞ্চলিক কূটনীতি নতুন করে উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
একজন পশ্চিমা কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, "যুদ্ধবিরতির এই মুহূর্তে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা ট্রাম্পের পক্ষ থেকে একটি ঝুঁকিপূর্ণ চাল ছিল। এতে যদি কাঙ্ক্ষিত ফল না আসে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে সেটি উল্টো প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।"
বাংলাবার্তা/এমএইচ