
ছবি: সংগৃহীত
চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে বর্তমানে দেশটির সফরে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে এ সফরকালে চীনের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিয়েছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। সফরের দ্বিতীয় দিনে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না (সিপিসি)-এর আন্তর্জাতিক বিভাগের মিনিস্টার লি জিয়াং ঝাও-এর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক বোঝাপড়া আরও দৃঢ় করার সম্ভাবনা উঠে আসে।
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে আয়োজিত এই বৈঠকে সিপিসি মিনিস্টার লি জিয়াং ঝাও বিএনপির সঙ্গে একটি আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈঠকে তিনি বিএনপির পক্ষ থেকে ‘এক চীন নীতি’র প্রতি প্রকাশিত অটল ও সুস্পষ্ট অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং বাংলাদেশের বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এমন অবস্থানকে চীনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত সহায়ক হিসেবে উল্লেখ করেন।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন, সংযোগ স্থাপন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে গৃহীত “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)”-এর ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। এটিকে বিএনপি পক্ষ থেকে এক “যুগান্তকারী ও অবিশ্বাস্য উদ্যোগ” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এবং প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংকে অভিনন্দন জানানো হয়।
বিএনপি প্রতিনিধি দল চীনকে অনুরোধ করে, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি–এ সংক্রান্ত প্রকল্পে চীনের সক্রিয় ও আরও গভীর অংশগ্রহণ কামনা করেছে। তারা বলেন, বাংলাদেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে চীনের বিনিয়োগ ও কারিগরি সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বৈঠকে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ, বাণিজ্য সহযোগিতা, যৌথ গবেষণা, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। উভয় পক্ষই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক শান্তি, এবং পারস্পরিক মর্যাদা ও আস্থা বৃদ্ধির গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করে।
বৈঠকের পর বিএনপি প্রতিনিধি দল চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার মিজ সুন হাইয়ান আয়োজিত এক মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেয়। এই ভোজে দুই দেশের প্রতিনিধিরা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার ব্যাপারে আলোচনা করেন।
সফরের দ্বিতীয় দিনে প্রতিনিধি দল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী সান ওয়েইডং-এর সঙ্গে বৈঠক করে। উক্ত বৈঠকে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক চর্চা ও আগামী দিনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার নানা দিক নিয়ে মতবিনিময় হয়।
এর আগে সফরের প্রথম দিন, ২৩ জুন সোমবার, বিএনপির প্রতিনিধি দল চীনের পিপলস গ্রেট হলে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটব্যুরো সদস্য ও ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস স্ট্যান্ডিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংঝং-এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেয়। ওই বৈঠকে লি হংঝং বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্র বিকাশে সকল পক্ষের গঠনমূলক ভূমিকাকে স্বাগত জানান।
বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বিএনপি বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। তিনি বলেন, “আমরা চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে চীন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পারে।”
চীন সফরে বিএনপির প্রতিনিধি দলে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, এবং চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির এই চীন সফর কেবল রাজনৈতিক সৌজন্য বিনিময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় চীন-বাংলাদেশ-বিএনপি সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে পারে। রাজনৈতিক সমঝোতা স্মারক, অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে চীনের অংশগ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ফোরামে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনাগুলো ভবিষ্যৎ কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ