
ছবি: সংগৃহীত
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দপ্তরে আবেদন করেছে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)। নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার শেষ দিনে, অর্থাৎ রোববার (২২ জুন) দুপুরে দলটির একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন ভবনে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদনপত্র জমা দেয়। নিবন্ধনের আবেদনের পাশাপাশি তারা শাপলা, মোবাইল ও কলম—এই তিনটি প্রতীককে নিজেদের পছন্দ হিসেবে কমিশনের কাছে তুলে ধরে।
আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে দলের শীর্ষ নেতারা গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানান।
দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে দেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় আমাদের সংগঠন বিস্তৃত করেছি। আগামী নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমরা সরকার গঠন করব। আমাদের লক্ষ্য ৪০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া, এর মধ্যে অন্তত ৩০০ আসনে বিজয় অর্জন করে এককভাবে সরকার গঠন করা। এনসিপি হবে দেশের ভবিষ্যতের নেতৃত্ব।”
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১০ মার্চ নির্বাচন কমিশন একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে নিবন্ধনহীন নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আবেদন চায়। প্রথম দফায় নির্ধারিত সময় ছিল ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে একাধিক রাজনৈতিক দলের অনুরোধ ও আনুষ্ঠানিক চিঠির প্রেক্ষিতে কমিশন আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা দুই মাস বাড়িয়ে ২২ জুন পর্যন্ত করে। এই সময়সীমার শেষ দিনেও কয়েকটি নতুন দল কমিশনের কাছে আবেদন করেছে, যার মধ্যে একটি হলো এনসিপি।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশন আবেদনকারী দলগুলোর সাংগঠনিক কাঠামো, কর্মসূচি, নীতিমালা, গঠনতন্ত্র এবং মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমের সত্যতা যাচাই-বাছাই করবে। এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সক্রিয়তা, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ এবং নির্বাচনী সম্ভাবনার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, যাচাই-বাছাই শেষে কমিশন চূড়ান্তভাবে নতুন দলগুলোকে নিবন্ধন দেবে, যা নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দসহ নানা সুবিধা নিশ্চিত করবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতীক হিসেবে যে তিনটি প্রতীক চেয়েছে—শাপলা, মোবাইল ও কলম—তা প্রতীকের মাধ্যমে দলটির দর্শন ও লক্ষ্যের একটি প্রতীকী ইঙ্গিত বহন করে। দলের এক নেতা বলেন, “শাপলা প্রতীক শান্তি ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক; কলম প্রতীক শিক্ষা ও চিন্তার মুক্তির, আর মোবাইল প্রতীক আধুনিক প্রযুক্তি ও তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে সংযোগের। এই তিনটির মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ তুলে ধরেছি।”
তবে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দল চূড়ান্ত নিবন্ধন না পাওয়া পর্যন্ত তারা নির্ধারিত প্রতীক চূড়ান্তভাবে দাবি করতে পারে না। নিবন্ধনপ্রাপ্তির পর কমিশনের প্রতীক তালিকা থেকে নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে ব্যবহৃত জনপ্রিয় প্রতীকের অধিকাংশই নিবন্ধিত দলগুলো আগেই দখল করে রেখেছে। তাই নতুন দলগুলোকে নতুন, অব্যবহৃত প্রতীক বেছে নিতে হয়।
গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপি নেতারা দাবি করেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে জনগণের সঙ্গে থেকে কাজ করছেন। তাদের দলটি জাতীয় ঐক্য, ধর্মনিরপেক্ষতা, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং ডিজিটাল সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করবে। এনসিপির প্রচারণায় উঠে আসছে সাধারণ নাগরিকের অধিকার, মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “আমরা আর সনাতন ধারার রাজনীতি চাই না। এনসিপি গঠিত হয়েছে ভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক চেতনা নিয়ে, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা ও ডিজিটাল গভার্নেন্সকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। আমরা রাজনীতিতে নতুন মাত্রা আনতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের তরুণ নেতৃত্ব এবং ভিশনারি পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ও সামাজিক ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।”
এনসিপির আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “যে দলগুলো সময়মতো আবেদন করেছে, তাদের সব কাগজপত্র যাচাই করে দেখা হবে। যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে যারা প্রাথমিকভাবে যোগ্য বিবেচিত হবে, তাদের মাঠপর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ইসি টিম পাঠাবে। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যেভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নির্বাচনী মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা প্রমাণ করে বাংলাদেশে রাজনীতির নতুন ধারায় নতুন শক্তির আবির্ভাব হতে চলেছে। যদিও নিবন্ধন পাওয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ সহজ নয়, তবুও এনসিপি নিজেদের প্রস্তুতির দিক থেকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে পেরেছে। এখন দেখার বিষয়, নির্বাচন কমিশন তাদের আবেদন কতটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে এবং দলটি শেষ পর্যন্ত নিবন্ধনপ্রাপ্ত হয়ে নির্বাচনী মাঠে প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে কিনা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ