
ছবি: সংগৃহীত
ঈদের আমেজে যখন দেশের মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রেক্ষাগৃহমুখী, তখন এই উৎসবকে কেন্দ্র করেই মুখর হয়ে উঠেছে দেশের চলচ্চিত্র জগৎ। ছয়টি নতুন সিনেমা মুক্তি পেয়েছে এবারের ঈদে, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি সিনেমা ইতোমধ্যেই দর্শকদের প্রশংসা কুড়াতে শুরু করেছে। তবে সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো ব্যাপার হলো—নায়িকাদের বিপুল উৎসাহ আর সরব উপস্থিতি। সিনেমা মুক্তির পর থেকেই প্রেক্ষাগৃহে ছুটে চলেছেন অভিনেত্রীরা। দর্শকদের সঙ্গে ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন, তাদের মতামত নিচ্ছেন, আবার তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে সিনেমার প্রচারেও করছেন সক্রিয় ভূমিকা।
এক সময় সিনেমার তারকাদের দেখা পাওয়াই ছিল দুষ্প্রাপ্য। কিন্তু বর্তমানে তারকারাই দর্শকদের জানিয়ে দিচ্ছেন, কখন কোন প্রেক্ষাগৃহে তারা আসছেন। ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম লাইভে, ভিডিও বার্তায় কিংবা স্টোরিজে, তারা প্রচারণায় নিজেরাই হয়ে উঠছেন সিনেমার মুখপাত্র।
প্রথম দিন থেকেই ঈদের ছুটিকে ঘিরে সিনেমার খবর নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দর্শকরা। সেই সুযোগেই নিজেদের সিনেমার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে মাঠে নেমেছেন নায়িকারা। ঢাকার বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহ থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনার সিনেপ্লেক্সগুলোতে দেখা গেছে তাঁদের সরব উপস্থিতি। কেউ এসেছেন দর্শকের প্রতিক্রিয়া জানতে, কেউ আবার নিজেই ছবি তুলেছেন সিনেমা পোস্টারের সামনে।
সাবিলা নূর, যিনি এবারের ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তাণ্ডব’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক করেছেন, নিজেই বলছেন—“প্রথমে ভয় ছিল দর্শক কেমন নেবেন, কিন্তু প্রথম দিনের সাড়া এতটা উষ্ণ যে আমি এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী। দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে রেসপন্স দেখে মনে হচ্ছে আমরা অনেক দূর যেতে পারব।” সিনেমাটির প্রচারণার দায়িত্ব কার্যত নিজ কাঁধেই তুলে নিয়েছেন সাবিলা। যেখানে ছবির প্রধান নায়ক শাকিব খান আবার একান্তে প্রচারণায় অংশ নেননি, সেখানেও দর্শক টানতে নিরলস ছুটেছেন তিনি।
‘তাণ্ডব’-এর আরেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে থাকা জয়া আহসানও প্রচারে অংশ নিয়েছেন সক্রিয়ভাবে। শুধু এ সিনেমা নয়, একইসঙ্গে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘উৎসব’ সিনেমার প্রচারেও তাকে দেখা গেছে।
এবারের ঈদে আরও কয়েকজন নবাগত নায়িকাও প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং মুক্তির পর সরাসরি প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। তাসনিয়া ফারিণ, যিনি ‘ইনসাফ’ সিনেমায় শরিফুল রাজের বিপরীতে অভিনয় করেছেন, মুক্তির দিনেই গিয়েছিলেন প্রেক্ষাগৃহে। পরে বিদেশে চলে যাওয়ায় তাঁকে নিয়মিত প্রচারণায় দেখা না গেলেও তাঁর আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। তিনি বলেন, “এত কাছ থেকে দর্শকের ভালোবাসা পাওয়াটা আমার জন্য একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা। প্রথমবারের মতো এত বড় পরিসরে দর্শকের সঙ্গে যুক্ত হতে পারা আমার জন্য দারুণ প্রাপ্তি।”
‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ সিনেমার মাধ্যমে নতুন পরিচয়ে দর্শকের সামনে এসেছেন আজমেরী হক বাঁধন। সিনেমার মুক্তির আগ থেকেই প্রচারণায় সক্রিয় ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় সপ্তাহেও একই তৎপরতায় প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত হয়েছেন, দর্শকের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “এই সিনেমা শুধু গল্প বলার নয়, বরং দর্শকের সঙ্গে একটা সংযোগ তৈরির সুযোগ। সেই সংযোগটা যখন পর্দার বাইরে এসে গড়ে তুলতে পারি, তখন সেটা খুব আনন্দের হয়ে ওঠে।”
‘নীলচক্র’ সিনেমার নায়িকা মন্দিরা চক্রবর্তী দর্শকের সাড়া পাচ্ছেন একক প্রচেষ্টায়। কারণ, সিনেমাটির নায়ক আরিফিন শুভ সমালোচনার মুখে বর্তমানে ঘরবন্দি। ঈদের পর থেকেই তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। ফলে পুরো প্রচারণার দায়িত্ব একাই কাঁধে তুলে নিয়েছেন মন্দিরা। তিনি বলেন, “প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম একা এত বড় কাজ সামলাতে পারব কি না, কিন্তু দর্শকের সাড়া পেয়ে সাহস পেয়েছি। এখন তো মনে হচ্ছে, একাই অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারব।”
‘উৎসব’ সিনেমায় অভিনয় করে দ্বিতীয়বারের মতো বড়পর্দায় এসেছেন সাদিয়া আয়মান। সিনেমাটির প্রচারণায় তিনিও সরব। বলেন, “আমি শুটিংয়ের সময় থেকেই অনুভব করেছিলাম, এটি দর্শকের ভালো লাগবে। এখন প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে যখন দেখি, তারা সিনেমা উপভোগ করছেন, তখন সেটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মনে হয়।”
সব সিনেমা যে ঈদে সফল হয়েছে, তা নয়। আদর আজাদ ও পূজা চেরী অভিনীত ‘টগর’ মুক্তি পেয়েছিল মাত্র ৭টি প্রেক্ষাগৃহে। দ্বিতীয় সপ্তাহেই এটি মাল্টিপ্লেক্স থেকে নেমে যায়। প্রথম সপ্তাহে তাদের দুই-একবার দেখা গেলেও পরে পুরোপুরি প্রচারণা থেকে হারিয়ে যান তারা। ফলে সিনেমাটি দর্শকের মধ্যে খুব একটা আলোড়ন তুলতে পারেনি।
সিনেমা বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সময়ের সিনেমা বাঁচানোর অন্যতম উপায় হচ্ছে তারকাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা। বিশেষ করে নায়িকারা যে পরিমাণ শ্রম ও আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসছেন, তা ঢাকাই চলচ্চিত্রের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। সিনেমার প্রচার যে শুধু প্রযোজক বা বিপণন সংস্থার দায়িত্ব নয়, সেটা আজ প্রমাণ করে দিচ্ছেন শিল্পীরা নিজেই।
সার্বিকভাবে বলা যায়, এবারের ঈদের সিনেমা নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ যেমন ছিল, তেমনি নায়িকাদের প্রচারণা মিশন সেই আগ্রহকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতের বাংলা সিনেমা নিঃসন্দেহে আরও প্রাণবন্ত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ