
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল নিয়ে চীন সফরে যাচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি আজ শনিবার (২২ জুন) রাতেই চীনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবে। এই সফর চীনের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সংগঠন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আমন্ত্রণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং এটিকে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও পার্টি-স্তরের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা। সফরের সময় প্রতিনিধি দলটি বেইজিংসহ চীনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে রাজনৈতিক সভা, পার্টি-টু-পার্টি আলোচনা, নীতিগত বিনিময় ও পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অংশগ্রহণ করবে।
এই প্রতিনিধি দলে মির্জা ফখরুল ছাড়াও রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্যরা ও চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা। প্রতিনিধিদের তালিকায় আছেন:
মির্জা আব্বাস, স্থায়ী কমিটির সদস্য
গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, স্থায়ী কমিটির সদস্য
সেলিমা রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য
ডা. এজেএম জাহিদ হোসেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা
জহির উদ্দিন স্বপন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা
ঈসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা
সুকোমল বড়ুয়া, ধর্মীয় সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্বকারী নেতা
অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক
এবিএম আব্দুস সাত্তার, বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব
এটি বিএনপির অন্যতম বৃহৎ ও উচ্চ পর্যায়ের বিদেশ সফর যা দলটির আন্তর্জাতিক নীতিকৌশল এবং কূটনৈতিক পুনর্মিলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
চীন সফরের ঠিক আগ মুহূর্তে, গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সন্ধ্যায় বিএনপি প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের আমন্ত্রণে বারিধারায় চীনা দূতাবাসে সৌজন্য সাক্ষাতে অংশ নেয়। সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে সফরপূর্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় এবং পারস্পরিক সহযোগিতা ও আস্থার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বিএনপি নেতাদের স্বাগত জানান এবং দুই দেশের রাজনৈতিক দলের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “চীন সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও পারস্পরিক সম্মানজনক সম্পর্কের পক্ষপাতী। চীন চায়, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিরবিচারে সম্পর্ক বজায় রাখতে।”
চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ইতিহাসে নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আঞ্চলিক সমীকরণে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, এবং চীনের প্রভাব বলয়ে বাংলাদেশের অবস্থান—এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির এই সফর এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আমিনুল হক বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে বিএনপি আন্তর্জাতিক পরিসরে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ও গ্রহণযোগ্যতা পুনরুদ্ধারে সক্রিয়। চীনের মতো একটি পরাশক্তির সঙ্গে পার্টি-টু-পার্টি সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা সেই কৌশলেরই অংশ।”
উল্লেখ্য, এর আগেও গত মাসে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে বেইজিংয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেয় বিএনপির প্রতিনিধিদল। সে সময় দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব এশিয়ার বহু দেশের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়। সেই সফরের ধারাবাহিকতায় এবার আরও উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠাল বিএনপি।
বিএনপির এই সফর শুধু একটি আনুষ্ঠানিক সফর নয়, বরং এটি দলটির রাজনৈতিক পুনঃসংগঠন এবং আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার কৌশলগত প্রয়াসের প্রতিফলন। চীনও বাংলাদেশে তাদের কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারে বড় দুই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।
এমন প্রেক্ষাপটে মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির এই সফর শুধু পার্টি স্তরে নয়, বরং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক রূপরেখা ও কৌশলে বড় ধরনের ইঙ্গিত বহন করছে বলেই অভিমত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। এখন নজর থাকবে চীন সফর শেষে বিএনপির কোনো কূটনৈতিক বিবৃতি বা ঘোষণার দিকে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ