
ছবি: সংগৃহীত
দেশজুড়ে বেড়েছে গরমের তীব্রতা, আর এই পরিস্থিতি আরও কিছুটা দীর্ঘায়িত হতে যাচ্ছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে যে স্বস্তিদায়ক বর্ষার বৃষ্টি হচ্ছিল, তা কয়েকদিনের জন্য কমে আসবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। ফলে বৃষ্টির অভাবে বেড়ে যেতে পারে তাপমাত্রা, দেখা দিতে পারে মৃদু তাপপ্রবাহও।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী মঙ্গলবার (২৪ জুন) পর্যন্ত বৃষ্টির প্রবণতা ও পরিমাণ কম থাকবে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বর্তমানে দুর্বল হয়ে পড়ায় দেশের অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টিপাতের হার অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। এর প্রভাবে আগামী কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, “মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা কমে গেছে। ফলে বৃষ্টিপাতের হার কমছে। আগামী কয়েকদিন দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি কমে গেলেও উত্তরাঞ্চলে তুলনামূলকভাবে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে ২৫ জুন থেকে আবার দেশজুড়ে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় তাপমাত্রা বেড়ে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠতে পারে। বিশেষ করে দেশের পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়ে কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু তাপপ্রবাহের অবস্থা তৈরি হতে পারে। এতে করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা এবং কৃষিখাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষ করে যেসব এলাকায় চলতি মৌসুমে বর্ষা কম হয়েছে, সেখানে মাটির আর্দ্রতা কমে গিয়ে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। একইসঙ্গে বাড়তে পারে পানির চাহিদা এবং বিদ্যুৎচাপ।
যদিও বৃষ্টিপাত সারাদেশে হ্রাস পেয়েছে, তারপরও শনিবার দেশের কিছু এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৫১টি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের মধ্যে ৩৯টিতেই বৃষ্টির রেকর্ড পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে নোয়াখালীর হাতিয়ায়—১২৩ মিলিমিটার।
এ ছাড়া অন্যান্য এলাকায় যেসব বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে:
টেকনাফ (কক্সবাজার) – ৮১ মিলিমিটার
ফেনী – ৭৬ মিলিমিটার
রামগতি (লক্ষ্মীপুর) – ৭২ মিলিমিটার
চট্টগ্রাম শহর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল – ৩০-৫০ মিলিমিটার
ঢাকা শহর – মাত্র ১ মিলিমিটার
ঢাকাবাসীদের জন্য এই তথ্য বেশ হতাশাজনক, কারণ চলতি সময়ের প্রচণ্ড গরমে স্বস্তির বৃষ্টি একেবারেই মেলেনি রাজধানীতে।
আবহাওয়ার এই পরিবর্তন জনস্বাস্থ্যেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বৃষ্টির অনিয়মিত আচরণ ডেঙ্গুর মতো মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়াতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, “বৃষ্টির পর গরম পড়লে মশা দ্রুত বংশবিস্তার করে। ফলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়তে পারে। জনগণকে এখনই সতর্ক হতে হবে।”
এদিকে গরমে বাড়তি চাহিদার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় চাপ বাড়তে পারে, বিশেষ করে মধ্যাহ্ন ও সন্ধ্যার সময়ে। কিছু এলাকায় লোডশেডিংয়ের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
আষাঢ় মাসের প্রথমার্ধে বৃষ্টির সুবাদে বোরো-পরবর্তী জমি চাষে কিছুটা গতি এলেও বৃষ্টির ধারা হঠাৎ কমে যাওয়ায় কিছু এলাকায় ধান রোপণে বিলম্ব হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের নদীতীরবর্তী ও বন্যা প্রবণ অঞ্চলে সঠিক সময়মতো বৃষ্টি না হলে কৃষিকাজে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি আবহাওয়া বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, “আষাঢ়ের শুরুতে নিয়মিত বৃষ্টি হলে আউশ ও আমনের চারা রোপণ ঠিকভাবে হয়। কিন্তু দীর্ঘ বিরতির ফলে চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে ২৫ জুনের পর যদি পুনরায় বৃষ্টি শুরু হয়, তবে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।”
বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবছর বর্ষাকালকে স্বস্তির এক সময় হিসেবে দেখে। কিন্তু চলতি বছরের আষাঢ়ে প্রকৃতি যেন বারবার পাল্টে ফেলছে তার রূপ। কয়েকদিন আগে নিয়মিত বৃষ্টিতে স্বস্তি থাকলেও এখন সেই বর্ষা কিছুটা ছন্দপতনে। আগামী কয়েকদিন দেশের বহু জায়গায় তীব্র গরমে জনজীবনে ভোগান্তি বাড়তে পারে।
তবে আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২৫ জুন থেকে যদি পুনরায় বৃষ্টি বাড়ে, তাহলে দেশের আবহাওয়া আবার স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে পারে। এর মধ্যেই জনগণকে সতর্ক থাকার এবং যথাযথভাবে গরম মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
পরবর্তী কয়েকদিনের আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি এবং তাপমাত্রার আপডেটের জন্য সবাইকে নিয়মিত আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ