
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ইরান যদি শান্তির পথে না আসে, তবে দেশটি আরও ভয়াবহ ও মর্মান্তিক পরিণতির মুখোমুখি হবে। রোববার (বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায়) হোয়াইট হাউজ থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এই কড়া হুঁশিয়ারি দেন। ভাষণটি এমন এক সময় এসেছে, যখন ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের যৌথ সামরিক অভিযানের পর মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।
ট্রাম্প তার ভাষণে বলেন, “হয় শান্তি স্থাপন হবে, না হয় ইরানের জন্য এক মর্মান্তিক পরিণতি ঘটবে। গত আট দিনে যা ঘটেছে, তার চেয়েও ভয়াবহ হবে পরবর্তী হামলা।” তিনি আরও বলেন, “আজ রাতের অভিযান ছিল সবচেয়ে জটিল, সবচেয়ে বৈধ এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবু বলছি—এখনো অনেক লক্ষ্যবস্তু বাকি আছে। যদি দ্রুত শান্তি না আসে, তাহলে আমরা সেগুলোকেও নিখুঁতভাবে, দক্ষতার সঙ্গে ও দ্রুত আঘাত করব।”
এই হুঁশিয়ারির মাধ্যমে ট্রাম্প কার্যত ইরানকে দুই পথের মধ্যে একটি বেছে নিতে বললেন—একদিকে কূটনৈতিক শান্তি, আর অন্যদিকে সামরিক ধ্বংস।
ট্রাম্প তার ভাষণে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে। তিনি বলেন, “আমি নেতানিয়াহুকে অভিনন্দন জানাতে চাই। আমরা এমন একটি দল হিসেবে কাজ করেছি, যেমনটি সম্ভবত এর আগে কখনো কেউ করেনি। আমরা ইসরাইলের জন্য ভয়াবহ হুমকি মুছে ফেলার পথে অনেক দূর এগিয়েছি।”
এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, ইরানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক হামলাটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের একক সিদ্ধান্ত নয়, বরং ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের ফল।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরণের কূটনৈতিক সমন্বয় মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে নতুন এক জোটবদ্ধতা তৈরি করছে, যার কেন্দ্রে রয়েছে ইরানের পারমাণবিক ও আঞ্চলিক প্রভাব মোকাবিলা করার অভিপ্রায়।
হামলার যৌক্তিকতা তুলে ধরে ট্রাম্প বলেন, “এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতা বন্ধ করা এবং সন্ত্রাসবাদের প্রধান রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক দেশ হিসেবে ইরান যে পারমাণবিক হুমকি সৃষ্টি করছে, তা থামানো। আমি বিশ্বের সামনে জানাতে পারি, আজ রাতের হামলা ছিল এক চমৎকার সামরিক সাফল্য।”
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এই হামলাকে কোনো একক সামরিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে না; বরং এটি তাদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অংশ, যার লক্ষ্য ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন ও সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতার পথ থেকে চূড়ান্তভাবে ফিরিয়ে আনা।
গত এক সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে, তার কেন্দ্রে রয়েছে ইরানের সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোর ওপর ধারাবাহিক হামলা। যদিও ইরান দাবি করেছে, তারা হামলার জবাব দেবে এবং নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করবে, তবে ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, প্রতিটি হামলা ছিল নির্দিষ্ট তথ্য ও বৈধতার ভিত্তিতে পরিচালিত।
ট্রাম্প বলেন, “আমরা যেসব লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছি, তা ইরানের সামরিক কাঠামোর জন্য অপরিহার্য ছিল। এর মাধ্যমে আমরা ইরানের আগ্রাসী মনোভাবকে দমন করতে সক্ষম হয়েছি।”
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই হামলা ইরানকে হয়তো সাময়িকভাবে দুর্বল করেছে, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে করেছে আরও অনিশ্চিত। বিশেষ করে যদি ইরান পাল্টা হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে চ্যালেঞ্জ জানায়, তবে সংঘাত আরও বিস্তৃত হতে পারে।
ভাষণের একদম শেষে ট্রাম্প বলেন, “আমরা শান্তি চাই। কিন্তু শান্তির জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। আর সেই শক্তি আমরা ব্যবহার করতেই প্রস্তুত।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা ও গোয়েন্দা তথ্য ব্যবস্থারও প্রশংসা করেন এবং বলেন, “আজ রাতের সফলতা প্রমাণ করে—যুক্তরাষ্ট্র যখন সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সেটি সর্বোচ্চ দক্ষতায় কার্যকর হয়।”
এই বক্তব্য ট্রাম্প প্রশাসনের চিরচেনা কৌশলেরই প্রতিফলন—‘শক্তির মাধ্যমে শান্তি’।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারিমূলক বক্তব্য ও সাম্প্রতিক হামলা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এক নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে। একদিকে কূটনৈতিক টেবিলের আহ্বান, অন্যদিকে নির্ভুল ও মারাত্মক সামরিক হামলার প্রস্তুতি—এই দুইয়ের চাপে ইরান কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, সেটিই এখন বিশ্ববাসীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটা নির্ভর করছে ইরানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপর। তারা কি শান্তির পথে হাঁটবে, নাকি যুদ্ধের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারিকে চ্যালেঞ্জ জানাবে? আগামী কয়েক দিনেই হয়তো এই প্রশ্নের জবাব স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ