
ছবি: সংগৃহীত
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও আলোচনায়। তবে এবার কোনো বিতর্কিত নীতিমালার কারণে নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নিজের অবদানের স্বীকৃতি না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রসঙ্গে মন্তব্য করেই শিরোনামে তিনি। সম্প্রতি এক বক্তব্যে ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি চার-পাঁচবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু তাকে সেই সম্মান দেওয়া হচ্ছে না "কারণ আমি একজন লিবারেল নই"—এই মন্তব্যে তিনি স্পষ্টভাবে বর্তমান রাজনৈতিক ও পুরস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি নিজের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
এই বক্তব্যটি দিয়েছেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে এক রাজনৈতিক সমাবেশে, যেখানে নিজের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাফল্যের ফিরিস্তি তুলে ধরছিলেন। ট্রাম্প বলেন, "আমার মতো লোকেরা কখনও নোবেল পায় না, কারণ আমি লেফট-লিনিয়েন্ট বা তথাকথিত রাজনীতিকভাবে শুদ্ধ নই। কিন্তু আমি কাজ করেছি রুয়ান্ডা, কঙ্গো, কসোভো, এমনকি ভারত-পাকিস্তানের মতো সংকটপূর্ণ এলাকায় শান্তি স্থাপনে।"
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের ঠিক কয়েকদিন আগে পাকিস্তান সরকার ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনীত করেছে। এক্স (পূর্বের টুইটার) প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক বিবৃতিতে পাকিস্তান দাবি করে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার চরম উত্তেজনার সময় ট্রাম্পের “সাহসী কূটনৈতিক নেতৃত্ব” না থাকলে দক্ষিণ এশিয়া যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেত।
পাকিস্তান আরও বলেছে, "ট্রাম্প সাহেবের হস্তক্ষেপ ছাড়া কাশ্মীর ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ অবধারিত হতো। তিনি উভয়পক্ষকে শান্তির পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রেখেছিলেন।"
এদিকে ভারত সরকার ট্রাম্পের এই বক্তব্য বা মনোনয়ন প্রসঙ্গে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে দিল্লি আগেই পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, কাশ্মীর ইস্যু কিংবা ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে তারা “তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতা” চায় না। তারা একে অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বিবেচনা করে থাকে এবং বাইরের হস্তক্ষেপ বরদাশত করে না।
ট্রাম্পের ভারত-পাকিস্তান বিষয়ে মধ্যস্থতার দাবি এই প্রথম নয়। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়েও তিনি একাধিকবার প্রকাশ্যে বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতার অনুরোধ করেছেন। যদিও ভারত সেই দাবি তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, এমন কোনো অনুরোধ দেওয়া হয়নি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তিতে ‘অবিচার’ নিয়ে কথা বলেছেন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক, ইসরায়েল-আরব শান্তিচুক্তি (আব্রাহাম অ্যাকর্ডস), আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অঞ্চলে সাময়িক শান্তিপূর্ণ অবস্থান তৈরির কথা তিনি বারবার তুলে ধরেছেন।
ট্রাম্পের মতে, "এই সবকিছুর জন্য, আমি নোবেল পাইনি কারণ আমি লিবারেল নই। তারা পুরস্কার দেয় তাদের যাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ একপাক্ষিক।"
প্রসঙ্গত, নোবেল শান্তি পুরস্কার কে পাবেন, তা নির্ধারণ করে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। প্রতি বছর এই কমিটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মনোনয়ন যাচাই করে একজন বা একাধিক বিজয়ী ঘোষণা করে। কমিটি সরকার, মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘের শাখা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞসহ নির্দিষ্ট যোগ্য সংস্থার প্রস্তাবিত নাম বিবেচনা করে থাকে।
তবে মনোনয়ন পাওয়া মানেই বিজয়ী হওয়া নয়। ২০২৬ সালের শান্তি পুরস্কার কারা পাবেন, তা এখনো অনেক দূরের বিষয়। তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক আত্মবিশ্বাস ও পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক সমর্থন তাকে এ দৌড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক বিভাজন এবং বিতর্কিত অভিজ্ঞতার কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নোবেল পাওয়া সহজ হবে না। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তার কিছু কূটনৈতিক পদক্ষেপ আলোচিত এবং তা নিয়েই আগামী দিনে বড় বিতর্ক তৈরি হতে পারে—বিশেষ করে যদি তাকে চূড়ান্ত মনোনীতদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ