
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরানের গোপন ও সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সামরিক হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এই হামলা শুধু একটি কৌশলগত পদক্ষেপ নয়, বরং এটি একটি বড় আকারের যুদ্ধের সূচনা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত—এমন দাবি জানিয়েছে ইয়েমেনের ইরানঘনিষ্ঠ সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথির রাজনৈতিক শাখা। তারা সরাসরি অভিযোগ করেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ উসকে দিতে চাচ্ছেন।
মার্কিন হামলার পরপরই কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা হুথি গোষ্ঠীর উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য মোহাম্মদ আল-ফারাহ-এর বরাত দিয়ে জানায়, “ডোনাল্ড ট্রাম্প চান যুদ্ধ দ্রুত শুরু হোক এবং দ্রুত শেষ হোক—এমন মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে এই হামলায়।”
তিনি বলেন, “এই হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন সামরিক পদক্ষেপ নয়। একটি-দুটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা বর্ষণ কোনো সমাপ্তি নয়, বরং যুদ্ধের সূচনা। এখন আর পালানোর সময় নেই।” হুথির মতে, এই পদক্ষেপই প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি বৃহৎ সংঘাতের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।
এই বিবৃতি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন এর ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগেই হুথি গোষ্ঠী হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে একত্র হয়ে ইরানে সরাসরি হামলায় অংশ নেয়, তবে লোহিত সাগরে মোতায়েন মার্কিন যুদ্ধজাহাজ তাদের ‘লিগিটিমেট টার্গেট’ হিসেবে গণ্য করা হবে।
হুথিদের পক্ষ থেকে এমন হুমকি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ লোহিত সাগর ও বাব আল-মান্দেব চ্যানেল হয়ে বিশ্ববাণিজ্যের প্রায় ১৫ শতাংশ জাহাজ চলাচল করে থাকে। সেখানে সংঘর্ষ শুরু হলে বৈশ্বিক জ্বালানি ও পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটতে পারে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে জানান, “আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায়—ফোরদো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহান—খুবই সফলভাবে হামলা চালিয়েছি। এখন আমাদের সব বিমান ইরানের আকাশসীমার বাইরে নিরাপদে ফিরে এসেছে।”
পরে তিনি আরও একটি ওপেন-সোর্স গোয়েন্দা বিশ্লেষণভিত্তিক তথ্য শেয়ার করেন, যেখানে দাবি করা হয়, “ফোরদো স্থাপনাটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।” এটি ছিল ইরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত এবং গোপন পারমাণবিক গবেষণা ও সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যা পাহাড়ের নিচে নির্মিত এবং কথিত আছে, প্রচলিত কোনো হামলায় এটি সহজে ধ্বংস করার মতো ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ফলে শুধু ইরান নয়, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য এখন উত্তেজনায় টালমাটাল। হুথির প্রতিক্রিয়া এটিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। এটি স্পষ্ট যে, যুদ্ধ এখন আর ইরান-যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্বে সীমাবদ্ধ থাকছে না। বরং ইয়েমেন, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইরাকের মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোকেও সরাসরি যুক্ত করতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ভবিষ্যতে একটি পূর্ণমাত্রার মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের রূপ নিতে পারে, যা তেল ও গ্যাসের বিশ্ববাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।
বিশ্ব শক্তিগুলোও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে রাশিয়া ও চীন ইতিমধ্যে এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা এখনো বিশ্ব রাজনীতির চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনি, তবে মধ্যপ্রাচ্যে যারা যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী অবস্থানে রয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে শক্ত প্রতিক্রিয়া আসা শুরু হয়েছে। হুথির মতো গোষ্ঠী যদি সরাসরি হামলা শুরু করে, তবে যুদ্ধের পরিধি বড় হবে এবং এর পরিণতি শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই উত্তেজনা ঠেকাতে আন্তর্জাতিক কূটনীতি কতটা কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে। তবে হুথিদের সর্বশেষ বার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছে—এই যুদ্ধ যদি শুরু হয়, তাহলে তা সহজে শেষ হবে না।
বাংলাবার্তা/এমএইচ