
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যের ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ করে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পথ সুগম করায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-কে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দিয়েছেন মার্কিন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান বাডি কার্টার। যুদ্ধপীড়িত অঞ্চলটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্পের ভূমিকাকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির কাছে চিঠি পাঠান তিনি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পলিটিকস মঙ্গলবার (২৪ জুন) এক বিশেষ প্রতিবেদনে এই মনোনয়নের খবর জানায়।
চিঠিতে বাডি কার্টার উল্লেখ করেন, “ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতের অবসান ঘটাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন, তা প্রশংসনীয়। তার নেতৃত্ব ছাড়া এই যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন সম্ভব হতো না। তিনি শুধু যুদ্ধ থামাননি, বরং ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রুখে দিতে চূড়ান্ত সাহস ও সিদ্ধান্তপ্রবণতা দেখিয়েছেন।”
কার্টার আরও বলেন, “নোবেল শান্তি পুরস্কার যেসব মানবিক ও বিশ্বব্যাপী শান্তির আদর্শকে মূল্যায়ন করে, ট্রাম্পের পদক্ষেপ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি কেবল একজন কূটনৈতিক মধ্যস্থতাকারী নন, বরং সংকটকালে নির্ভরযোগ্য নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি। তার সাহসিকতা, কৌশলগত বিচক্ষণতা ও শান্তির জন্য লড়াই সত্যিই অনন্য।”
গত ১৩ জুন ইরানের গোপন পারমাণবিক স্থাপনার ওপর ইসরাইলের একটি আকস্মিক হামলার মাধ্যমে উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে। এর জবাবে ইরানও ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। সপ্তাহজুড়ে পাল্টাপাল্টি হামলার ফলে পরিস্থিতি দ্রুত পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ নেয়। অবশেষে ট্রাম্পের ‘শক্ত অবস্থান’ ও ‘কৌশলগত আলোচনার চাপ’-এর ফলে সোমবার (২৩ জুন) বিকেলে ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ইতি ঘটে এবং মঙ্গলবার রাত থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের মধ্যেই উভয় পক্ষ আংশিকভাবে হামলার অভিযোগ করেছে, যা শান্তিচুক্তির স্থায়িত্ব নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
এমন একটি সময় এই মনোনয়ন এলো, যখন ট্রাম্পের ভূমিকাকে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ইরান-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি ছাড়াও গত বছর ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনায়ও ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতা করেন, যার ফলে সীমান্তে সহিংসতা হ্রাস পায়। এ প্রেক্ষাপটেই পাকিস্তান সরকার ট্রাম্পকে ২০২৬ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের রাজনৈতিক দর্শন যতই বিতর্কিত হোক না কেন, জটিল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় তার সরাসরি কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ যুদ্ধের ভয়াবহতা থামাতে যে ভূমিকা রেখেছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
এর আগে ২০২০ সালেও মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের মধ্যে 'আব্রাহাম অ্যাকর্ড' স্বাক্ষরে মধ্যস্থতার জন্য ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন নরওয়ের সংসদ সদস্য ক্রিশ্চিয়ান টাইব্রিং গজেদে। তবে সে সময় তিনি পুরস্কার পাননি।
বিশ্লেষকদের মতে, এবার ইরান ও ইসরাইলের মতো দুই চরম বৈরী শক্তির মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্পের ভূমিকা আরও কার্যকর, সরাসরি এবং দৃশ্যমান হওয়ায় এই মনোনয়ন বিশ্বজুড়ে ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ