
ছবি: সংগৃহীত
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এক বিবৃতিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লার একটি ফেসবুক পোস্টের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া ওই পোস্টে তিনি যাচাই-বাছাই ছাড়াই দুদকের মহাপরিচালকসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানহানিকর ও বিভ্রান্তিকর অভিযোগ উত্থাপন করেন বলে দুদকের দাবি।
দুদক বলছে, এই পোস্টটি নিছক গুজব নয়, বরং এটি কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন এবং জনসাধারণকে ভুল বার্তা দেয়ার অপচেষ্টা। দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, “জাতীয় দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক বা অন্য কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর। প্রকৃতপক্ষে, কিছু প্রতারক চক্র নিজেদের দুদকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করছে—এদের সঙ্গে দুদকের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
দুদক জানায়, ইতোমধ্যেই এ ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে তারা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং কয়েকজন প্রতারককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক প্ল্যাটফর্মে দুদক থেকে জনসচেতনতামূলক বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে জনগণ এমন প্রতারণা থেকে সাবধান থাকে।
দুদক আরও অভিযোগ করেছে, ইদানীং দেখা যাচ্ছে—কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়ে পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুদকের বিরুদ্ধেই উল্টো দোষারোপ করছেন। এতে শুধু জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছেন না, বরং একটি সাংবিধানিক সংস্থার সুনামও নষ্ট হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, “এ ধরনের পোস্ট, মন্তব্য বা অভিযোগ নিরপেক্ষ অনুসন্ধান ছাড়াই দেওয়া হলে তা মিথ্যা অপপ্রচারে রূপ নেয় এবং সমাজে ভুল বার্তা যায়। জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদক সবসময় ন্যায়, সততা ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে কাজ করে থাকে। ফলে এমন বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য ও পোস্ট দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত।”
দুদক স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে—কোনো কর্মকর্তাই কখনো কাউকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নামে অর্থ দাবি করতে পারেন না। কেউ যদি এমন ফোন কল, এসএমএস বা মেসেজ পান, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে দুদকের টোল ফ্রি হটলাইন ১০৬-এ ফোন করে অভিযোগ জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনে কাছের দুদক কার্যালয় বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, হাসনাত আবদুল্লার মতো রাজনৈতিক পরিচয়ধারী কোনো ব্যক্তি যদি যাচাই-বাছাই ছাড়াই জনসম্মুখে এমন অভিযোগ করেন, তাহলে সেটি সামাজিক দায়িত্বহীনতা হিসেবেই বিবেচিত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দুদক বলছে, ব্যক্তি বিশেষকে নয়, বরং প্রতারণামূলক গুজব, বিভ্রান্তি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্যের বিরুদ্ধে তারা আইনি ও নৈতিকভাবে লড়াই করে যাবে।
এ প্রসঙ্গে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ যখন তীব্রতর হচ্ছে, তখন এমন গুজব ও অপপ্রচার দুদকের চলমান অভিযানকে দুর্বল করার অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। আমরা জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।”
এই ঘটনায় প্রতীয়মান হচ্ছে, প্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন মতপ্রকাশের অধিকার দিয়েছে, তেমনি অপপ্রচারের হাতিয়ারও হয়ে উঠেছে। জাতীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে অমুলক ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করা শুধু সংবিধানবিরোধীই নয়, আইনগতভাবেও দণ্ডনীয় অপরাধ হতে পারে।
দুদকের পক্ষ থেকে আরও একবার সবাইকে সতর্ক করে বলা হয়েছে—কারো কাছ থেকে টাকা চেয়ে কেউ দুদকের নাম ভাঙালে সঙ্গে সঙ্গে হটলাইন ১০৬ নম্বরে জানিয়ে দিন। পাশাপাশি এই সংক্রান্ত যেকোনো বিভ্রান্তিকর তথ্য শেয়ার বা ছড়ানোর আগে যাচাই করে নিন—কারণ সত্য প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বশীল আচরণ সকলেরই কর্তব্য।
বাংলাবার্তা/এসজে