
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর ওপর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের এক সুনির্দিষ্ট ও সমন্বিত অভিযানে অন্তত পাঁচজন ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ১৫ সেনা সদস্য, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে হেলিকপ্টারে করে তেলআবিবের সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে এই হামলা চালানো হয়। সংবাদমাধ্যম প্যালেস্টাইন ক্রনিকল এবং বিভিন্ন ইসরাইলি সূত্র জানিয়েছে, এটি ছিল পূর্ব পরিকল্পিত এবং কৌশলগতভাবে বিভক্ত দুই ধাপে পরিচালিত একটি হামলা। প্রথম ধাপে, হামাসের যোদ্ধারা একটি নির্দিষ্ট সেনা ঘাঁটির চারপাশে অবস্থানরত সেনাদের ওপর অতর্কিতভাবে গুলিবর্ষণ ও বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ঘটনাস্থলেই বেশ কয়েকজন সেনা নিহত ও আহত হন।
এরপরই শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপের হামলা। আহত সেনাদের উদ্ধার করতে আসা একটি ইসরাইলি সামরিক বহরকে লক্ষ্য করে আরও একটি আক্রমণ চালায় হামাসের আরেকটি ইউনিট। এতে একটি সাঁজোয়া যান ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তাতে আগুন ধরে যায়। এতে আহতদের সংখ্যা আরও বাড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার শব্দে খান ইউনিস এলাকা কেঁপে ওঠে। পুরো এলাকা মুহূর্তেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হামাসের যোদ্ধারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও ইসরাইলি সেনারা দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিক্রিয়া চালিয়ে যায়।
হামলার পরপরই ইসরাইলের সেনাবাহিনী (আইডিএফ) খান ইউনিসের বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলা চালায়। মূলত আহত সেনাদের উদ্ধার এবং নিখোঁজদের খোঁজে শুরু হয় এই সামরিক প্রতিক্রিয়া। ইসরাইলি ড্রোন এবং হেলিকপ্টারের সাহায্যে পুরো এলাকায় নজরদারি জোরদার করা হয়।
ইসরাইলি সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, এ অভিযানের সময় কয়েকজন সেনা নিখোঁজ ছিল, যাদের সন্ধানে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। তারা দাবি করেছে, হামাসের যোদ্ধারা টানেল বা গোপন ঘাঁটি ব্যবহার করে অতর্কিত এই হামলা চালিয়েছে।
আহতদের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে সরাসরি তেল হাসোমের মিলিটারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং তারা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। ইসরাইলি সেনা কর্তৃপক্ষ নিহতদের নাম পরিচয় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি, তবে তাদের পরিবারের সদস্যদের ইতিমধ্যে অবহিত করা হয়েছে।
হামলার দায় স্বীকার করে এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত অবরোধ, বেসামরিক মানুষের ওপর দমন-পীড়ন এবং নির্বিচারে বিমান হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। তাদের দাবি, “ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ওপর যে বর্বরতা চালাচ্ছে, তার জবাব দিতে প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে।”
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজার উত্তরে জাবালিয়া ও দক্ষিণে খান ইউনিসে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নতুন করে অভিযান শুরু হয়েছে। বিশেষ করে টানেল ধ্বংস ও প্রতিরোধ গোষ্ঠীর ঘাঁটি চিহ্নিত করার লক্ষ্য নিয়ে ইসরাইলি সেনারা এলাকায় জোর তল্লাশি চালাচ্ছে। এরই মধ্যে হামাসের পক্ষ থেকেও পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়েছে বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা গাজা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সাম্প্রতিক সংঘাতে নতুন করে প্রাণহানির ঘটনা ঘটায় তারা উভয় পক্ষকে সংযত থাকার এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরাইলের দখলদারিত্ব জোরদার করার উদ্যোগ এবং হামাসের প্রতিরোধমূলক হামলা পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলছে। একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি না হলে, গাজার মতো সংকুচিত এলাকায় বড় ধরনের সংঘর্ষ যে কোনো মুহূর্তে বিস্ফোরিত হয়ে পড়তে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ