
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি একসময় ছিলেন পর্দার অন্যতম ব্যস্ত এবং সফল মুখ। ‘অগ্নি’, ‘ভালোবাসার রঙ’, ‘পোড়ামন’-এর মতো সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয়ের মধ্য দিয়ে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া এই নায়িকা দীর্ঘদিন ধরেই রুপালি পর্দা থেকে দূরে। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তার অবস্থান ঠিকই বজায় ছিল—সেই চলচ্চিত্রে নয়, রাজনীতির মঞ্চে। আর এখন সেই আলোচনায় নতুন মোড়—গোপনে দেশত্যাগ।
সাম্প্রতিক সময়ে মাহির একটি ফেসবুক পোস্টে দেশ ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছেন তিনি। ১৯ জুন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর পর তিনি ওই পোস্টে লেখেন, “এইবার বিদায় বাংলাদেশ!” যদিও তিনি দাবি করছেন, ‘ছুটি কাটাতে’ গেছেন, তবে নেটদুনিয়ায় ইতোমধ্যে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে—এটি কি কেবল ঘোরাঘুরির উদ্দেশ্যেই, নাকি এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক বাস্তবতা?
মাহি রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন আওয়ামী লীগের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সক্রিয় সদস্য হিসেবেই বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত ছিলেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও চাপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন, যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। নির্বাচনে শূন্য ভোট পেয়ে হতাশা ও প্রশ্নবিদ্ধ বাস্তবতার মুখে পড়তে হয় তাকে।
নির্বাচনের পর মাহি আবারও শোবিজে ফেরার চেষ্টা করেন। একাধিক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, “আমি চলচ্চিত্রে ফিরতে চাই, দর্শক আমার দ্বিতীয় পরিচয় ভুলে যাবে না।” কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। কোনো নতুন সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। টিভি অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট আয়োজনে কিংবা মিডিয়া মঞ্চেও তাকে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত দেখা যাচ্ছে।
২০২৫ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগে বাধ্য হন, তখন থেকেই ঘনিয়ে আসে রাজনৈতিক অস্থিরতা। সেই সময় থেকেই মাহিয়া মাহিকেও আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সবশেষ উপস্থিতি ছিল মে মাসের শেষ দিকে। এরপর পুরোপুরি আড়ালে চলে যান তিনি।
নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, মাহি সেই সময় থেকেই বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বিষয়টি গণমাধ্যমের দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকলেও কাছের কয়েকজন সহকর্মী আগে থেকেই তা আঁচ করতে পেরেছিলেন। অবশেষে ১৯ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান তিনি, যেটি নিজের ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন।
মাহির পোস্টে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন তার ‘ছুটি কাটানো’র দাবির সত্যতা নিয়ে। একজন লেখেন, “দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে একজন আওয়ামীপন্থী শিল্পী কীভাবে শুধু ঘুরতে গিয়েছেন বলা যায়?” আবার কেউ লিখেছেন, “মাহি সাহস করে নায়িকা হয়েছিলেন বাস্তব জীবনে, কিন্তু রাজনৈতিক বাস্তবতা তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, ২০২৫ সালের রাজনৈতিক রদবদলের পর ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠদের অনেকেই নানাভাবে বিদেশে অবস্থান নিচ্ছেন। মাহিও হয়তো সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন।
মাহির বর্তমান অবস্থান নিয়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা কিছুটা নিরব। প্রযোজক ও পরিচালকদের কেউই তার নতুন কোনো প্রকল্পের কথা বলছেন না। আবার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একজন অভিজ্ঞ অভিনেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “মাহির রাজনৈতিক পরিচয় তার অভিনয় জীবনকে প্রতিকূল করে তুলেছে। এখন পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় হয়তো তিনি নিরাপত্তা বা সামাজিক প্রতিক্রিয়ার ভয়ে ফিরে আসছেন না।”
মাহি নিজে যদিও এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলেননি, তবে তার এই আকস্মিক দেশত্যাগ এবং রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সময়ের মিল দর্শকদের এবং অনুসারীদের প্রশ্ন তুলতে বাধ্য করেছে। তিনি কি চিরতরের জন্যই সিনেমা এবং দেশ ছেড়ে চলে গেলেন? নাকি শুধুই সাময়িক বিরতি?
এখন সেটাই অপেক্ষার বিষয়। তবে এটুকু নিশ্চিত—মাহিয়া মাহির ক্যারিয়ার এখন এক অজানা মোড়ে দাঁড়িয়ে, যেখান থেকে তার ফিরে আসা যেমন কঠিন, তেমনি নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করাও অসম্ভব নয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ