
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ডিজিটাল লেনদেনের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সূচিত হলো মঙ্গলবার, যখন দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলো গুগলের জনপ্রিয় ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা গুগল পে। ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, যিনি বলেন, “বাংলাদেশে গুগল পে-কে স্বাগত জানাই। আমি বিশ্বাস করি, গুগল পে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।”
বাংলাদেশের বাজারে গুগল পে সেবা আনতে যৌথভাবে কাজ করেছে সিটি ব্যাংক, গুগল, মাস্টারকার্ড এবং ভিসা। প্রাথমিক পর্যায়ে এই সেবা চালু করা হয়েছে সিটি ব্যাংকের গ্রাহকদের জন্য, যারা তাদের মাস্টারকার্ড বা ভিসা কার্ড গুগল ওয়ালেটে যুক্ত করে গুগল পে ব্যবহার করতে পারবেন। পরবর্তীতে দেশের অন্যান্য ব্যাংকের কার্ডগুলোও ধাপে ধাপে এই প্ল্যাটফর্মের আওতায় আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন।
বাংলাদেশে প্রায় ৯৫ শতাংশ স্মার্টফোন অ্যান্ড্রয়েড চালিত হওয়ায় গুগল পে ডিজিটাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গুগল পে ব্যবহারকারীদের জন্য লেনদেন আরও সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ হবে। এটি স্মার্টফোন ব্যবহার করে যেকোনো পয়েন্ট-অব-সেল (পিওএস) টার্মিনালে শুধু ফোন ট্যাপ করেই অর্থ পরিশোধের সুযোগ দেয়, যা প্লাস্টিক কার্ড বহনের ঝামেলা থেকে মুক্তি দেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর স্পষ্ট করে বলেন, “এটা একটা ভুল ধারণা যে গুগল পে ব্যবহার করে শুধুমাত্র বিদেশিরা দেশ থেকে অর্থ নিয়ে যাবে। আমি এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত নই।” তিনি আরও বলেন, “দেশের ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থায় গুগল পে বড় ধরনের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।”
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশরুর আরেফিন বলেন, “গুগল, মাস্টারকার্ড ও ভিসাসহ আমাদের অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের জন্য একটি দূরদর্শী ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম তৈরিতে সাহায্য করবে। আমরা এই উদ্ভাবনী সেবা দেশের গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরে গর্বিত।”
গুগল পে মূলত গুগল ওয়ালেট অ্যাপের একটি ফিচার, যা 'ট্যাপ টু পে' নামে পরিচিত। এটি ব্যবহার করতে হলে নিচের বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে:
স্মার্টফোনে এনএফসি (Near Field Communication) প্রযুক্তি থাকতে হবে।
সাধারণত ফোনের Settings > Connected devices > Connection preferences অপশনে গিয়ে এনএফসি চালু করতে হয়।
গুগল ওয়ালেটকে ডিফল্ট পেমেন্ট অ্যাপ হিসেবে সেট করতে হবে।
মোবাইল সেটিংসে গিয়ে কন্টাক্টলেস পেমেন্টের জন্য গুগল ওয়ালেটকে প্রাধান্য দিতে হবে।
সাথে একটি বৈধ মাস্টারকার্ড বা ভিসা ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড যুক্ত থাকতে হবে।
প্রাথমিকভাবে সিটি ব্যাংকের গ্রাহকেরা এই সুবিধা পাবেন।
স্মার্টফোনের স্ক্রিনলক ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক।
পিন, প্যাটার্ন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ইত্যাদি সেট করে রাখুন নিরাপদ লেনদেনের জন্য।
গুগল ওয়ালেটে ‘ট্যাপ টু পে’ সেটআপ কীভাবে করবেন?
১. গুগল ওয়ালেট অ্যাপ খুলুন।
আপনার ফোনে গুগল ওয়ালেট অ্যাপ চালু করুন।
২. পেমেন্ট সেটআপে প্রবেশ করুন।
উপরের ডানদিকে প্রোফাইল ছবি/অ্যাকাউন্ট আইকনে ট্যাপ করে ‘Payment Setup’ নির্বাচন করুন।
৩. এনএফসি চালু আছে কি না দেখুন।
Settings > Connected devices থেকে এনএফসি সক্রিয় আছে কিনা নিশ্চিত করুন।
৪. গুগল ওয়ালেটকে ডিফল্ট পেমেন্ট অ্যাপ করুন।
ফোনের সেটিংসে গিয়ে ‘Contactless Payment’ অপশনে গুগল ওয়ালেট নির্বাচন করুন।
৫. কার্ড যুক্ত করুন।
মাস্টারকার্ড বা ভিসার কার্ড যুক্ত করতে ‘Add Payment Method’ ক্লিক করুন।
৬. কার্ডের অবস্থা পরীক্ষা করুন।
কার্ড যুক্ত হয়ে গেলে গুগল ওয়ালেটে কার্ডের পাশে কোনো বার্তা থাকবে কিনা দেখুন। কোনো সমস্যা থাকলে নির্দেশনা অনুসরণ করুন অথবা ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করুন।
৭. স্ক্রিনলক সেটআপ নিশ্চিত করুন।
নিরাপদ লেনদেনের জন্য পিন, প্যাটার্ন বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিশ্চিত করুন।
গুগল ওয়ালেট দিয়ে লেনদেন করার ধাপ
মোবাইল আনলক করুন।
পিন, প্যাটার্ন বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে ফোন আনলক করতে হবে। যদিও গুগল নির্দেশনা অনুসারে কিছু ক্ষেত্রে ফোন আনলক না করেও পেমেন্ট করা যেতে পারে।
কন্টাক্টলেস পেমেন্ট রিডারের কাছে ফোন রাখুন।
পেমেন্ট রিডারের সামনে ফোনের পিছনের অংশ স্পর্শ করান।
লেনদেন যাচাই ও সম্পন্ন করুন।
যাচাই শেষে লেনদেন সফল হলে স্ক্রিনে নীল চেকমার্ক দেখাবে।
ডিজিটাল লেনদেনকে সহজতর করার পাশাপাশি গুগল পে বাংলাদেশে ক্যাশলেস অর্থনীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে তরুণ ও প্রযুক্তি সচেতন প্রজন্ম দ্রুত এই সেবা গ্রহণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গুগল পে ব্যবহার করার ফলে ছোট ব্যবসায়ীরা সহজে পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন, যা ডিজিটাল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে। এর ফলে নগদ অর্থের ওপর নির্ভরশীলতা কমে আসবে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়বে।
বাংলাদেশে ডিজিটাল অর্থপ্রদান ব্যবস্থার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে গুগল পে চালু হওয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নতুন গতি এনে দেবে। দেশব্যাপী ধাপে ধাপে অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও যুক্ত হলে দেশ ডিজিটাল অর্থনৈতিক রূপান্তরে দ্রুত এগিয়ে যাবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ