
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ ও নিরুৎসাহিত করতে মাঠ পর্যায়ের নানা সংস্থা ও গোয়েন্দা ইউনিটের মাধ্যমে গত ৯ মাসে সারা দেশে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব অভিযানের মাধ্যমে একদিকে যেমন বিপুল পরিমাণ কর ও শুল্ক ফাঁকির তথ্য উদঘাটিত হয়েছে, অন্যদিকে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের রাজস্ব আদায় করতেও সক্ষম হয়েছে এনবিআর।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত ৯ মাসে অর্থাৎ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত সময়কালে এনবিআরের বিভিন্ন ইউনিট ও গোয়েন্দা সংস্থা মিলে সর্বমোট ১৬,৫৭২টি কর ও রাজস্ব ফাঁকি সংক্রান্ত অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব অভিযানে মোট জড়িত রাজস্বের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরাসরি আদায় করা গেছে ৯৯৪ কোটি টাকা—যা চলমান অর্থবছরে রাজস্ব আহরণে একটি বড় সাফল্য হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এনবিআরের আওতাধীন বিভিন্ন কাস্টম হাউসগুলো এই সময়ে ২,২১৫টি অভিযান পরিচালনা করে, যার মাধ্যমে ১৮৩ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করা হয়। আশার কথা হলো, এই টাকার সম্পূর্ণটাই আদায় করা সম্ভব হয়েছে, যা কাস্টমস বিভাগের দক্ষতা ও তৎপরতার প্রমাণ দেয়।
রাজস্ব ফাঁকি শনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটগুলোর তৎপরতা। এই সংস্থাগুলো সম্মিলিতভাবে ৬,৮০৩টি অভিযান চালায়। এতে ৫১৩ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির চিত্র উঠে আসে। আদায় হয় ৮৯ কোটি টাকা। একইসঙ্গে এনবিআরের অধীনস্থ "ভ্যাট গোয়েন্দা" বা নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, মূল্য সংযোজন কর, ঢাকা—মোট ২৩১টি অভিযান চালিয়ে ১,৬৩৯ কোটি টাকার ফাঁকি চিহ্নিত করে এবং ২৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়।
অন্যদিকে, কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর আলাদাভাবে অভিযান চালিয়ে ৭৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের খবর জানিয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে পরিচিত সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) ১৮১টি অভিযান চালিয়ে ৩৬৬ কোটি টাকার কর ফাঁকির তথ্য সংগ্রহ করে এবং ১৯৪ কোটি টাকা আদায় করে, যা প্রায় ৫৩ শতাংশের কাছাকাছি।
একইভাবে এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটও পিছিয়ে নেই। তারা ১৭০টি অভিযানে ১,৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করে এবং এর বিপরীতে আদায় করে ১১০ কোটি টাকা।
দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এনবিআরের আওতাধীন ৪১টি কর অঞ্চল এই সময়ে ৬,৯৭২টি অভিযান পরিচালনা করে। এতে ১,৫৮৮ কোটি টাকার ফাঁকি ধরা পড়ে এবং আদায় হয় ১০৫ কোটি টাকা।
এনবিআরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, "আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শুধু আদায় নয়, আমরা উৎসস্থলে কর ফাঁকি বন্ধ করতে চাই। ভবিষ্যতে প্রযুক্তি-ভিত্তিক নজরদারি আরও জোরদার করা হবে।"
এই অভিযানের পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এনবিআরের নতুন নেতৃত্ব ও নীতির অধীনে রাজস্ব প্রশাসন আগের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয় ও দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। যদিও আদায়কৃত রাজস্ব এখনও সম্ভাব্য ফাঁকির তুলনায় অনেক কম, তবু এসব অভিযান দীর্ঘমেয়াদে কর সচেতনতা এবং শৃঙ্খলা ফেরাতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এনবিআরের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতে মাঠ পর্যায়ের সব ইউনিটের সমন্বয়ে আরও জোরালোভাবে রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ ও আদায় কার্যক্রম চালানো হবে।
বাংলাবার্তা/এসজে