
ছবি: সংগৃহীত
দুই বাংলার চলচ্চিত্র অঙ্গনে বহুবছর ধরেই নিজের অভিনয়শৈলী ও সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে ভিন্নমাত্রার এক পরিচিতি গড়ে তুলেছেন জয়া আহসান। বয়সের ঘর পঞ্চাশ পেরিয়ে গেলেও যে তার আবেদন কিংবা অভিনয় দক্ষতায় বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি—তা তিনি প্রমাণ করে চলেছেন একের পর এক কাজের মাধ্যমে। তেমনি এক অনন্য নজির হয়ে উঠেছে তার সাম্প্রতিক অভিনীত সিনেমা ‘তাণ্ডব’, যেখানে তিনি ‘সায়রা আলি’ নামের এক সাংবাদিক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন।
রায়হান রাফী পরিচালিত আলোচিত এ সিনেমাটি গত ঈদে মুক্তি পায়। এতে শাকিব খানের বিপরীতে জয়া আহসানকে দেখা যায় একটি দৃঢ়চেতা, আত্মবিশ্বাসী এবং সাহসী সাংবাদিকের ভূমিকায়। তার চরিত্রের নাম ‘সায়রা আলি’। সিনেমার গল্পে দেখা যায়, সন্ত্রাসী হামলায় জিম্মি হয়ে পড়া পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে আলোচনার জন্য চারজন ব্যক্তিকে ডাকা হয়, যাদের একজন ছিলেন এই সায়রা। গল্পের মোড়ে মোড়ে তার চরিত্রটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই নাটকীয় ও রহস্যময়।
সিনেমায় জয়াকে কখনো দেখা গেছে স্লিভলেস কালো টপে, কখনো বা ওপেন ব্লেজারে—যার নিচে খোলামেলা পোশাক, গলায় ঝোলানো সাংবাদিকদের পরিচিত আইডি কার্ড। একেবারে সাংবাদিকদের বাস্তব লুক অনুসরণ করেই ডিজাইন করা হয়েছে তার পোশাক ও মেকআপ। লুকে রয়েছে আধুনিকতা, আত্মবিশ্বাস, ও সঙ্গে ছিল একরকম ‘স্টেটমেন্ট’। এই চরিত্রে জয়াকে দেখে দর্শকদের অনেকেই চমকে গেছেন, আবার কেউ কেউ হয়েছেন মুগ্ধ।
এ নিয়ে জয়া আহসান নিজেও চুপ থাকেননি। গত শুক্রবার (২০ জুন) দুপুরে নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম পেজে তিনি ‘সায়রা আলি’ রূপে একটি ফটোশুটের একগুচ্ছ ছবি শেয়ার করেন। সেই ছবিগুলো সামাজিক মাধ্যমে রীতিমতো ঝড় তুলেছে। মুহূর্তেই কমেন্ট বক্সে উপচে পড়ে হাজারো ভক্ত-অনুরাগীর মন্তব্য।
একজন নেটিজেন মন্তব্য করেন, ‘৫২ বছর বয়সেও এমন গ্ল্যামারাস লুক? এটা কি সম্ভব? তিনি যেন সময়কে হারিয়ে দিয়েছেন।’ আরেকজন লেখেন, ‘দিন দিন জয়ার বয়স যেন কমছে, এখনো ২৪ বছর বয়সী তরুণী বলে ভুল হয়।’ এমন অসংখ্য মন্তব্যের মাধ্যমে বোঝা যায়, পর্দার সায়রা আলি কেবল পর্দায় নয়, দর্শকদের হৃদয়েও জায়গা করে নিয়েছেন।
জয়ার এই চরিত্রটি শুধু একটি সাংবাদিক নয়, বরং একজন নারীর ব্যক্তিত্ব, প্রতিবাদী কণ্ঠ এবং অনমনীয় অবস্থানের প্রতিচ্ছবিও হয়ে উঠেছে। এই সিনেমার মাধ্যমে ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িকা চরিত্রের ব্যাকড্রপে যে ধাঁচের পরিবর্তন আসছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
এদিকে শুধু বাংলাদেশেই নয়, কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিতেও জয়ার জনপ্রিয়তা আজ ঈর্ষণীয় পর্যায়ে। তার নতুন সিনেমা ‘ডিয়ার মা’, যেটি পরিচালনা করেছেন অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, ইতোমধ্যেই টলিউডে বেশ আলোচনায় রয়েছে মুক্তির আগেই।
এতসব অর্জনের মধ্যেও জয়া আহসানের অভিনয়ের প্রতি দায়বদ্ধতা, পেশাদারিত্ব ও শারীরিক ফিটনেস ধরে রাখার প্রচেষ্টা তাকে আলাদা করেছে অন্যদের থেকে। ‘সায়রা আলি’ চরিত্রটি সেই ধারারই আরেকটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত—যেখানে বয়সকে জয় করে একজন শিল্পী তার সর্বোচ্চটা তুলে ধরেন।
একদিকে সৌন্দর্য, অন্যদিকে অভিনয়ের নিরীক্ষা—দুই মেলবন্ধনে দাঁড়িয়ে জয়া যেন নিজেই একটি অনন্য স্ট্যান্ডার্ড হয়ে উঠেছেন এই সময়ের বাংলা চলচ্চিত্রে। 'সায়রা আলি' চরিত্রে জয়ার ঝলক যেন কেবল অভিনয়ের নয়, বরং নারীর আত্মপ্রত্যয়েরও এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ