
ছবি: সংগৃহীত
৫ আগস্ট এখন থেকে হবে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’। এই দিনটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে প্রতি বছর সাধারণ ছুটি হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বুধবার (২ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ হাসান স্বাক্ষরিত একটি অফিসিয়াল প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকার প্রতিবছর ৫ আগস্ট তারিখকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দিনটি এখন থেকে সারা দেশে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে সাধারণ ছুটি হিসেবে গণ্য হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন সংক্রান্ত পূর্বঘোষিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী ৫ আগস্ট দিনটিকে 'ক' শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এটি এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিবসের মর্যাদা পাচ্ছে।
পরিপত্রটির নম্বর: ০৪.০০.০০০০.৪১৬.২৩.০০২.১৭.৬১৪
প্রকাশের তারিখ: ২১ অক্টোবর ২০২৪
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তারিখে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে উত্তাল আন্দোলনে নামেন।
এই অভ্যুত্থান ক্রমেই দেশব্যাপী গণআন্দোলনে রূপ নেয় এবং এতে শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রার্থী, পেশাজীবী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ যোগ দেন। একে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা, যা পরবর্তীতে দেশের শাসন কাঠামো ও প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা ঘটায়।
পরবর্তীকালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রেক্ষাপটও এই আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সে কারণেই এই দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করার দাবি উঠেছিল বহু পক্ষ থেকে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের অভ্যুত্থান ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সম্মান জানানো একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এটি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে গণতন্ত্র, ন্যায্যতা ও সাংবিধানিক অধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ও ওই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রিফাত হাসান বলেন, “এই দিনটি শুধু আমাদের নয়, সমগ্র বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। সরকার এই দিনকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে জাতিকে একটি ঐতিহাসিক সত্যের সঙ্গে যুক্ত করলো। এটা আমাদের অনেক দিনের প্রত্যাশা ছিল।”
৫ আগস্ট দিবসটি পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ কর্মসূচি হাতে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকার ও গণমাধ্যমকে এই দিবসের তাৎপর্য প্রচারে ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’কে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা এবং ৫ আগস্টকে সাধারণ ছুটি হিসেবে নির্ধারণ করার মাধ্যমে সরকার যে বার্তাটি দিচ্ছে, তা হলো— রাষ্ট্র নাগরিকের কণ্ঠস্বর শুনছে, এবং গণআন্দোলনের শক্তিকে সম্মান জানাতে প্রস্তুত। এটি একদিকে যেমন ইতিহাস সংরক্ষণের অংশ, তেমনি আগামী দিনের সুশাসনের ভিত্তি রচনার প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ