
ছবি: সংগৃহীত
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানিতে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও সমগ্র বছরের হিসেবে আশাব্যঞ্জক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয় আগের বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার সমান।
রপ্তানির বার্ষিক চিত্রে ইতিবাচক ধারা থাকলেও জুন মাসে রপ্তানি আয় কিছুটা কমেছে। ইপিবির প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসে রপ্তানি আয় ছিল ৩ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের জুন মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম।
ইপিবির ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “জুন মাসে ঈদুল আজহা উপলক্ষে অধিকাংশ কারখানা এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় বন্ধ ছিল। দীর্ঘ ছুটির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, ফলে রপ্তানিও প্রত্যাশিত হারে হয়নি।”
তাঁর মতে, যদি উৎসবজনিত ছুটি না থাকত, তাহলে রপ্তানি আয় আরও বেশি হতে পারত এবং হয়তো জুনেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যেত।
আনোয়ার হোসেন আরও জানান, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে রপ্তানিতে কিছুটা মন্দাভাব দেখা গেছে। তিনি বলেন, “সম্প্রতি ভারতের আমদানি নীতিতে কিছু পরিবর্তন এসেছে। কাঁচামাল, পাটজাত পণ্য এবং কিছু তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে তারা শুল্ক বাড়িয়েছে বা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যা আমাদের রপ্তানিতে প্রভাব ফেলেছে।”
ভারতের পাশাপাশি ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও কিছুটা চাহিদা মন্দা দেখা দিয়েছে। বিশ্ববাজারে ভোক্তা ব্যয়ের সংকোচন, মূল্যস্ফীতি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তা এসবের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জুন মাসের শেষদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি এবং আন্দোলন রপ্তানির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বন্দরে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই, শুল্ক ছাড় এবং চালান অনুমোদনের কাজে ধীরগতি সৃষ্টি হওয়ায় অনেক পণ্য সময়মতো রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি।
আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য রাজস্ব বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করেছি। এখন বিষয়গুলো অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে, তবে জুনের কিছু ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব হয়নি।”
রপ্তানি প্রবৃদ্ধির বড় অংশই এসেছে তৈরি পোশাক (RMG) খাত থেকে, যা মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে বিশেষভাবে কৃত্রিম ফাইবার, স্পোর্টসওয়্যার এবং টেকনিক্যাল গার্মেন্টস-এর চাহিদা বেড়েছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে।
তবে হোম টেক্সটাইল, চামড়াজাত পণ্য, পাটপণ্য এবং কৃষিজ রপ্তানিতে কিছুটা স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেছে।
ইপিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, রপ্তানির বৈচিত্র্য ও গন্তব্য বাড়ানোর জন্য এখন থেকে কাজ শুরু করা হয়েছে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার নতুন বাজারে প্রবেশের জন্য কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ করার লক্ষ্যে নীতিগত সংস্কারও প্রক্রিয়াধীন।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নীতিনির্ধারকদের সময়োচিত সিদ্ধান্ত এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করা গেলে আগামী অর্থবছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির মাইলফলক স্পর্শ করা সম্ভব।
সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রপ্তানি চিত্র একটি মিশ্র বার্তা দিচ্ছে। বছর শেষে মোট রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশার আলো দেখালেও মাসিক পর্যায়ে কিছুটা দুর্বলতা এবং নির্দিষ্ট বাজারে সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে একটি অধিকতর রূপান্তরযোগ্য রপ্তানি কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা। সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা সম্ভব বলেই আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাবার্তা/এসজে