
ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) এবং সমমানের পরীক্ষার ফলাফল ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে প্রকাশ হতে পারে বলে জানিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটি। ইতোমধ্যেই ফল প্রস্তুতির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন কেবল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের অপেক্ষা।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাজধানীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার। তিনি জানান, ফলাফল প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ চূড়ান্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ের সম্মতির ভিত্তিতেই গ্রহণ করা হবে।
অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, “সাধারণত লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের নিয়ম অনুসরণ করা হয়। এবারও আমরা সেই লক্ষ্য রেখেই কাজ করছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যেই ফল প্রকাশ সম্ভব হবে।”
এদিকে, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিশাল। ২০২৫ সালের এই পাবলিক পরীক্ষায় ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন পরীক্ষার্থী ছিলেন মোট ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ১ হাজার ৫৩৮ জন এবং ছাত্রী ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন। সারা দেশে ২ হাজার ২৯১টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৮ হাজার ৮৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
এসএসসি ছাড়াও মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনেও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবারে পরীক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন এবং ছাত্রী ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন। এই বোর্ডের অধীনে পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে মোট ৭২৫টি কেন্দ্রে, যেখানে ৯ হাজার ৬৩টি মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ জন এবং ছাত্রী ছিল ৩৪ হাজার ৯২৮ জন। কারিগরি শিক্ষার প্রসার বাড়ার পাশাপাশি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
শিক্ষা বোর্ড সূত্রে আরও জানা গেছে, উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। ফলাফল প্রস্তুতের প্রক্রিয়াও দ্রুত গতিতে চলছে। এ কাজে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে ফলাফল নির্ভুল ও সময়মতো প্রকাশ করা যায়।
ফলাফল প্রকাশের দিন প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় দিলে সেই দিনই শিক্ষা বোর্ডগুলো সমন্বিতভাবে ফল প্রকাশ করবে। সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর সকাল ১০টার দিকে ফল প্রকাশ করা হয়। একই সময়ে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে এবং এসএমএসের মাধ্যমে তাদের ফলাফল জানতে পারবে।
ফলাফল প্রকাশের দিন শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফলাফলের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীকে উপস্থাপন করবেন। পরে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। কারণ এই ফলাফলের ওপর নির্ভর করে তাদের উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ভর্তির ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। তবে শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফলাফল প্রকাশের পরপরই অনলাইন ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে এবং নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী এইচএসসির পাঠক্রমও চালু করা হবে।
উল্লেখ্য, এবার এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং শেষ হয় ১২ মার্চ। মাদ্রাসা বোর্ডের শেষ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৫ মে। তাই বোর্ডগুলো চেষ্টা করছে মাদ্রাসাসহ সব ফলাফল একসঙ্গে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে প্রকাশ করতে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন সেই দিনটির অপেক্ষায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ