
ফাইল ছবি
আজ বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫—দেশজুড়ে একযোগে শুরু হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। সকাল ১০টায় বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে এবারের এইচএসসি যাত্রা, যা চলবে টানা দেড় মাস, ১০ আগস্ট পর্যন্ত।
এ বছর দেশের ১১টি সাধারণ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন। তারা অংশ নিচ্ছে ৯ হাজার ৩১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে, আর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে। করোনার সম্ভাব্য প্রভাব মাথায় রেখে, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে এবং প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে নজিরবিহীন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন বোর্ডভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী রয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে—২ লাখ ৯১ হাজার ২৪১ জন। অন্যদিকে, সর্বনিম্ন পরীক্ষার্থী বরিশাল বোর্ডে—৬১ হাজার ২৫ জন।
এছাড়া অন্যান্য বোর্ডেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন।
২০২৩ সালের মতো এবারও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে পুনঃবিন্যাসকৃত সিলেবাসে, তবে সব বিষয়, পূর্ণ নম্বর এবং পূর্ণ সময়েই। কোনো বিষয়ের পরীক্ষা সংক্ষিপ্তভাবে হচ্ছে না, বরং পূর্ণাঙ্গ কাঠামো মেনেই নেওয়া হচ্ছে লিখিত ও ব্যবহারিক অংশ।
প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্রসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র এরইমধ্যে পৌঁছে গেছে পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে। সব কেন্দ্রে সিট প্ল্যান ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে।
করোনার নতুন ঢেউয়ের শঙ্কা মাথায় রেখে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি এবার ৩৩ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাগুলো হলো:
পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশের সময় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক;
প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে;
কমপক্ষে ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বসতে হবে পরীক্ষার্থীদের;
পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে পৌঁছাতে হবে।
কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবীর বলেন, “বোর্ডগুলো প্রস্তুতির দিক থেকে পুরোপুরি প্রস্তুত। প্রশ্নপত্র এবং অন্যান্য সামগ্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।”
বিগত কয়েক বছর প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়ায় এবার তার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছে প্রশ্নপত্র পরিবহন ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া।
ড. এহসানুল কবীরের ভাষ্য, “এবার প্রশ্নফাঁসের কোনো সুযোগই নেই। সকল তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যাতে কেউ প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত গুজব ছড়াতে না পারে।
পরীক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে, যেগুলো না মানলে ফল বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেগুলো হলো:
পরীক্ষা শুরুর সময়ের অন্তত ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে পৌঁছাতে হবে
ওএমআর ফরমে সব তথ্য যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে
উত্তরপত্র ভাঁজ করা যাবে না
মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস কেন্দ্রের ভেতর আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
বহুনির্বাচনি ও সৃজনশীল অংশের মধ্যে কোনো বিরতি থাকবে না
প্রবেশপত্রে উল্লিখিত বিষয়ের বাইরের কোনো বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যাবে না
নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ পরীক্ষা দিতে পারবে না
উপস্থিতি পত্রে সঠিকভাবে স্বাক্ষর দিতে হবে
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা
পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে পরীক্ষাকেন্দ্রের আশেপাশে ধূমপান, শব্দদূষণ ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ করে শহরের বড় কেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং পর্যবেক্ষণ টিমের মাধ্যমে সরাসরি নজরদারি চালানো হবে।
আজ থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের লাখ লাখ তরুণ-তরুণী তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাযাত্রার এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে। পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, মনোযোগ ও সঠিক প্রস্তুতি।
পরীক্ষার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল রাখতে সংশ্লিষ্ট সব মহলের সহযোগিতা ও সতর্কতা অপরিহার্য।
শিক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা—তারা যেন ভালোভাবে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে এবং ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যেতে পারে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ