
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) অবকাঠামোগত সংকট, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং একাডেমিক কার্যক্রমে অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে কলেজ কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের আগামীকাল (২২ জুন) দুপুর ১২টার মধ্যে আবাসিক হলগুলো খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তের আওতার বাইরে থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পেশাগত এমবিবিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও বিদেশি শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২১ জুন) দুপুরে কলেজ সভাপতি ও অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম স্বাক্ষরিত এক অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি—বিশেষত একাডেমিক ভবন ও হোস্টেলের অব্যবস্থাপনা, পরিত্যক্ত স্থাপনার ঝুঁকি এবং নাজুক অবকাঠামোগত অবস্থা—নিয়ে চলমান অস্থিরতা নিরসনে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিল সদস্যরা শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক হিসেবে বিবেচনা করেন এবং তা বাস্তবায়নে নীতিগতভাবে একমত হন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে ইতোমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এগুলোর দৃশ্যমান ফলাফল পেতে একটি নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন। তবে শিক্ষার্থীরা এই সময়সীমা মেনে না নিয়ে তাৎক্ষণিক সমাধানের দাবিতে অনড় অবস্থান নেয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
বিশেষ করে ডা. ফজলে রাব্বি হলের পরিত্যক্ত ও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ চতুর্থ তলা খালি করার জন্য বারবার নোটিশ ও বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের অসহযোগিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, এই ধরনের অসহযোগিতা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতাই নয়, শিক্ষার্থীদের জীবননাশের ঝুঁকিও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
অধ্যক্ষের সই করা বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই পরিস্থিতির মধ্যেই সদ্য ভর্তি হওয়া ৮২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্বপ্রণোদিতভাবে ওরিয়েন্টেশন বর্জন করেছে, যা ঢাকা মেডিকেল কলেজের দীর্ঘ ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। এতে করে একাডেমিক কার্যক্রমে মারাত্মক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। অন্যান্য মেডিকেল কলেজের তুলনায় ঢামেক শিক্ষার্থীরা য ohnehin চাপে থাকেন, এই অচলাবস্থা তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো—বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা, মেডিকেল অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের একটি নির্ধারিত পরিদর্শন ঢামেক থেকে সরিয়ে অন্য মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজের জন্য নয়, দেশের স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যবস্থার জন্যও একটি নেতিবাচক বার্তা।
এই প্রেক্ষাপটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজের সকল একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং শিক্ষার্থীদের আগামীকাল রোববার (২২ জুন) দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়, চলমান এমবিবিএস পেশাগত পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থী এবং বিদেশি শিক্ষার্থীরা এই বন্ধ ও হল ত্যাগের নির্দেশের বাইরে থাকবেন। তাদের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশের অন্যতম পুরনো ও গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক গভীর প্রশাসনিক ও কাঠামোগত সংকটে উপনীত হলো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, কর্তৃপক্ষের নানা প্রতিশ্রুতি দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়ন হয়নি। এমন অবস্থায় তারা নির্ধারিত সময়সীমা দিয়ে হলেও পরিবর্তনের সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখতে চান।
এদিকে, শিক্ষক, চিকিৎসক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একাংশ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, একাডেমিক কার্যক্রমের এই স্থবিরতা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং কলেজের আন্তর্জাতিক মান নিয়েও প্রশ্ন তুলবে। এখন দেখার বিষয়, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কীভাবে দ্রুত পরিস্থিতির সমাধান করে শিক্ষার্থীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ