ছবি: সংগৃহীত
প্রায় দেড় বছরের অপেক্ষার পর প্রকাশিত হলো ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল। এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬ হাজার ৫৫৮ জন প্রার্থী। বুধবার (১৮ জুন) রাতে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) ওয়েবসাইটে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত বছরের ২৩ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে এই লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণকারী বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থীর মধ্যে কমিশনের অনুমোদনক্রমে সাময়িকভাবে উত্তীর্ণ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ৬ হাজার ৫৫৮ জন।
৪৫তম বিসিএসের পুরো প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল প্রায় তিন বছর আগে। ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন। ঐ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বিপুল সংখ্যক আবেদন জমা পড়ে। মোট আবেদনকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার।
এরপর ২০২৩ সালের ১৯ মে অনুষ্ঠিত হয় প্রিলিমিনারি টেস্ট। অংশগ্রহণ করেন ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১৯ জন পরীক্ষার্থী। মোট আবেদনকারীর প্রায় ৭৭ শতাংশ প্রার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মাত্র ১২ হাজার ৭৮৯ জন। ফলাফল প্রকাশ করা হয় পরীক্ষার মাত্র ১৭ দিনের মধ্যে, যা বিসিএস ইতিহাসে তুলনামূলক দ্রুততম ফল প্রকাশের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে ধরা হয়।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দ্রুতই ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে কমিশন। কিন্তু তখন দেশের রাজনীতিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় তৈরি হয় নিরাপত্তা সংশয়। নির্বাচনী উত্তাপ এবং সম্ভাব্য অস্থিরতার কথা মাথায় রেখে অনেক প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি পেছানোর দাবি জানান।
কমিশন প্রার্থীদের সেই দাবি আমলে নিয়ে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা পিছিয়ে ২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করে। তবে এরপর ফল প্রকাশে প্রায় সাড়ে ১৬ মাসের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায়, যা অনেক প্রার্থীর মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
পিএসসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফলাফলের পূর্ণ তালিকা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য পিএসসির ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, “যুক্তিসংগত কারণে যদি কোনো সংশোধনের প্রয়োজন হয়, তবে কমিশন সে অধিকার সংরক্ষণ করে।”
এই লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৬ হাজার ৫৫৮ জন প্রার্থীকে এখন পরবর্তী ধাপে, অর্থাৎ মৌখিক পরীক্ষার (ভাইভা) জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। ভাইভা গ্রহণ শেষে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন।
৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, এই বিসিএসের মাধ্যমে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র, কর, শুল্ক, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্যাডারে এসব নিয়োগ সম্পন্ন হবে।
এ ছাড়া ক্যাডারবহির্ভূত বা নন-ক্যাডার পদে আরও ১ হাজার ২২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। ফলে চূড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩ হাজার ৩৩১ জন, যা উত্তীর্ণদের তুলনায় অনেক কম। অর্থাৎ এই লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি চাকরির বাইরে থাকবেন—এটি বিসিএস প্রতিযোগিতার নির্মম বাস্তবতা।
প্রার্থীদের মধ্যে অনেকে ফল প্রকাশের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশে দ্রুততা থাকলেও লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশে দেড় বছরের বেশি সময় নেওয়াটা অযৌক্তিক।
তারা আরও বলেন, “আমরা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় বিসিএসের প্রস্তুতিতে ব্যয় করি। কিন্তু পরীক্ষার পর ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা আমাদের পরিকল্পনা ও ভবিষ্যতের চাকরির পথ আটকে দেয়।”
তবে কমিশন সূত্র বলছে, ৪৫তম বিসিএস একটি বড় ব্যাচ ছিল এবং লিখিত পরীক্ষায় বেশি সংখ্যক প্রার্থী অংশ নেওয়ায় খাতা মূল্যায়ন, মডারেশন, প্রক্রিয়াকরণে বেশি সময় লেগেছে। একাধিক খাতে মূল্যায়ন যাচাই ও প্রশাসনিক কাঠামোগত সীমাবদ্ধতাও এই দীর্ঘ বিলম্বের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
কমিশনের এক সদস্য জানিয়েছেন, “লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এখন আমরা মৌখিক পরীক্ষা দ্রুত শুরু করবো। প্রার্থীদের উচিত এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করা।”
মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি ও স্থান পিএসসির ওয়েবসাইট ও জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে বলেও জানানো হয়।
৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশে দেশের হাজার হাজার উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীর জীবনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। তবে সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে এখন দরকার আরও বেশি মনোযোগ ও প্রস্তুতি।
দেশের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ সরকারি চাকরির এই প্রক্রিয়ায় যারা এতদূর এসেছেন, তাদের জন্য এই ফলাফল বড় সাফল্য হলেও সামনের পথ আরও কঠিন। ভাইভা পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রস্তুতি, আত্মবিশ্বাস, সঠিক তথ্য জ্ঞান ও ব্যক্তিত্বের প্রকাশই তাদের শেষ গন্তব্যে পৌঁছাতে সহায়ক হবে।
পিএসসির ওয়েবসাইট: www.bpsc.gov.bd
(ফলাফল দেখতে এই লিংকে প্রবেশ করুন)
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



