
ছবি: সংগৃহীত
শ্রীলঙ্কার কলম্বোর ঐতিহাসিক সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব (এসএসসি) মাঠকে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাটসম্যানদের স্বর্গভূমি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মাঠে টস জিতে ব্যাটিং নেওয়াকে সহজ সিদ্ধান্ত হিসেবে ধরা হয়, কারণ উইকেট থাকে ব্যাটিংবান্ধব, প্রথম তিন দিনে বল তেমন টার্ন বা সুইং করে না। কিন্তু সেই ব্যাটিংবান্ধব উইকেটেই একেবারে ভেঙে পড়ল বাংলাদেশের টপ অর্ডার। প্রথম দিনেই ৮ উইকেট হারিয়ে টাইগাররা সংগ্রহ করেছে মাত্র ২২০ রান, ইনিংস গুটিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে দল।
গল টেস্টে জোড়া শতক হাঁকিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, আবারও ব্যর্থতার তালিকায় নাম লেখালেন। তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৮ রান। অন্যদিকে, ওপেনার এনামুল হক বিজয় ফেরেন শূন্য রানে, গল টেস্টে যিনি করেছিলেন মাত্র ০ ও ৪ রান। তার ফর্মহীনতা টানা তিন ইনিংস ধরে দলের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।
দিনের শুরুতেই দলীয় ৫ রানে ফেরেন এনামুল হক বিজয়। টানা তিন ইনিংসে ব্যর্থতার রেকর্ড নিয়ে এখন তার দলে থাকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। এরপর কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন সাদমান ইসলাম অনিক ও মুমিনুল হক। কিন্তু সে জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দলীয় ৪৩ রানে মুমিনুল ফিরে গেলে ফের শুরু হয় ব্যাটিং বিপর্যয়।
সাদমান, যিনি গল টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৬ রানের দৃঢ় ইনিংস খেলেছিলেন, আজ কিছুটা স্বচ্ছন্দ্যে ব্যাট করলেও ৪৬ রানে থামেন। আর শান্ত, যিনি ছিলেন সবার দৃষ্টি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে, আজ যেন ব্যাট হাতে ছায়ামাত্র— মাত্র ৮ রান করেই বিদায় নেন।
এক পর্যায়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ৭৪। কিন্তু হঠাৎ করেই মাত্র ২ রানের ব্যবধানে দুই সেট ব্যাটার সাদমান ও শান্ত বিদায় নিলে চাপ আরও বাড়ে।
মিডল অর্ডারে লিটন কুমার দাস কিছুটা লড়াইয়ের আভাস দেন। গল টেস্টে এক ইনিংসে ৯০ রানের ইনিংস খেলা এই ব্যাটার আজ ৩৪ রান করেন, তবে বড় ইনিংস গড়ার আগেই বিদায় নেন। তিনি ছিলেন একমাত্র ব্যাটার যিনি প্রতিপক্ষ বোলারদের বিরুদ্ধে কিছুটা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছেন।
চা বিরতির আগে তার বিদায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস ধুঁকতে শুরু করে। প্রথম দিন শেষ হওয়ার আগেই ৮ উইকেট হারানো কেবল উদ্বেগজনক নয়, বরং দলের মানসিকতা ও ব্যাটিং প্রস্তুতির দারুণ ঘাটতিরও ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশের রান রেট ছিল অত্যন্ত মন্থর। প্রথম ১০০ রান তুলতে লেগে যায় ৪০ ওভার। শ্রীলঙ্কার স্পিন ও মিডিয়াম পেসাররা উইকেট থেকে বাড়তি কিছু না পেলেও, কঠোর লাইন ও লেংথ বজায় রেখে ব্যাটসম্যানদের ভুল শটে উইকেট তুলে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
এদিকে কলম্বো টেস্টে প্রথম দিনের উইকেট এমন নয়, যেখানে ৮ উইকেট হারানোর কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়। এই মাঠে অতীতে বহুবার বড় স্কোর দেখা গেছে। তার পরও বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা স্পষ্ট।
প্রথম দিনেই ৮ উইকেট হারিয়ে বসায়, এখন দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশ দল চাইবে Tail-End ব্যাটারদের নিয়ে অন্তত ২৫০–২৭০ রান পর্যন্ত যেতে। তবে সে সম্ভাবনা ক্ষীণই বলা চলে।
এই ম্যাচে বাংলাদেশ যদি বড় স্কোর করতে না পারে, তাহলে প্রথম ইনিংস থেকেই ম্যাচটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় ইনিংসে দলকে ফের ঘুরে দাঁড়াতে হলে দরকার হবে চরম আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য ও টেকনিক্যাল ব্যাটিং।
কলম্বো টেস্টের প্রথম দিনেই বাংলাদেশ আবারও প্রমাণ করল—ব্যাটিং-সমস্যা এখনো কাটেনি। ব্যাটিংবান্ধব উইকেটেও যেভাবে ৮ উইকেট হারিয়ে বসেছে, তাতে প্রশ্ন উঠছে প্রস্তুতি, আত্মবিশ্বাস এবং নির্বাচিত একাদশ নিয়ে।
দ্বিতীয় দিন দলের পারফরম্যান্সেই নির্ভর করবে, তারা ম্যাচে থাকতে পারবে কিনা—না কি আবারও একপেশে হারে মুখোমুখি হবে টাইগাররা। এখন দেখার বিষয়, বাকি ব্যাটাররা কী করেন এবং বোলাররা কতটা লড়াই করতে পারেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ