
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ফুটবলের দায়িত্বে আবারও ডাচ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। দীর্ঘ ১০ বছর পর ফের বাংলাদেশের ফুটবল প্রশাসনে সম্পৃক্ত হতে যাচ্ছেন তিনি। তবে এবার কোচ নয়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবেই দায়িত্ব নিতে পারেন এই ইউরোপীয় কোচ। তার সঙ্গে বাংলাদেশ ফুটবলের পুরনো আরেক চেনা মুখ রেনে কোস্টারকেও ফেরানোর পরিকল্পনা করছে বাফুফে।
যদিও এখনো সবকিছু চূড়ান্ত নয়, তবে দুজনের সঙ্গেই যোগাযোগ চলছে এবং তারা দুজনেই বাংলাদেশে ফিরতে আগ্রহী বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
৫৫ বছর বয়সী লোডভিক ডি ক্রুইফ ২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পান। তার অধীনে বাংলাদেশ খুব বেশি সাফল্য না পেলেও দলীয় শৃঙ্খলা ও টেকনিক্যাল স্ট্রাকচারে কিছু পরিবর্তন এনেছিলেন, যা তখন আলোচিত হয়েছিল। খেলোয়াড়দের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল পেশাদারিত্বপূর্ণ এবং বাফুফের পরবর্তীত্বে কোচ নিয়ে নানা গোলযোগের মধ্যেও ডি ক্রুইফের নাম অনেকেই সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করেন।
ডাচ এই কোচের সঙ্গে এক সময় কাজ করেছেন আরেক ডাচ সহকারী কোচ রেনে কোস্টার। বয়সভিত্তিক দল নিয়ে কাজ করার সুবাদে কোস্টার বাংলাদেশের ফুটবলাঙ্গনে পরিচিত নাম।
বর্তমানে আবারও তার নাম আলোচনায় ওঠার বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন ডি ক্রুইফ। খুব স্পষ্ট করে কিছু না বললেও ইঙ্গিতপূর্ণভাবে তিনি বলেন, “আমি আলোচনা (বাফুফের সঙ্গে) সম্পর্কে অবগত, এ মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলতে পারছি না। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন। শুভেচ্ছা।”
অন্যদিকে রেনে কোস্টার বলেন, “নিউজ যেহেতু হয়েছে, সেক্ষেত্রে চুক্তি হতেও পারে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। বাংলাদেশে বয়সভিত্তিক দল নিয়ে কাজ করার সময়ের কথা এখনো মনে আছে। সাফল্যও এসেছিল।”
বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পদে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন সাইফুল বারী টিটু। তবে জানা গেছে, চলতি মাসেই তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে এবং বাফুফে আর তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে আগ্রহী নয়। ফলে এই পদে নতুন কাউকে আনতেই হচ্ছে। আর সেই নতুন মুখ হিসেবে সবচেয়ে আলোচিত নাম এখন লোডভিক ডি ক্রুইফ।
আর রেনে কোস্টারের দায়িত্ব হতে পারে এলিট ফুটবল একাডেমির প্রধান হিসেবে। এর আগে তিনি সিলেট ফুটবল একাডেমির দায়িত্ব পেয়ে সাফল্য দেখালেও পরবর্তীতে তাকে কাজ না দিয়ে অবহেলার শিকার হতে হয়।
২০০০ দশকের মাঝামাঝিতে রেনে কোস্টারকে সিলেট ফুটবল একাডেমির জন্য নিয়োগ দিয়েছিল বাফুফে। কিন্তু সেই সময়ে তৎকালীন বাফুফে সভাপতির অব্যবস্থাপনায় কোস্টারকে কোনো কাজ দেওয়া হয়নি। তার পারিশ্রমিকও আটকে দেওয়া হয়। এতে তিনি ফিফার কাছে অভিযোগ করেন, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের ফুটবল প্রশাসনের জন্য লজ্জাজনক দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে। ফিফার হস্তক্ষেপে সেই অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য হয় বাফুফে এবং মোটা অঙ্কের জরিমানা গুণতে হয়।
এই ক্ষোভ ভুলে কি আবার বাংলাদেশে আসতে রাজি হবেন রেনে কোস্টার? নিজেই বলেছেন—
“সেই সময়টা আমার জন্য দুঃখজনক ছিল, তবে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে আবারও কাজ করতে আগ্রহী। এ দেশের ফুটবলের উন্নয়ন সম্ভব, যদি সঠিক পরিকল্পনায় এগোনো যায়।”
বাফুফের ভেতরের সূত্রগুলো বলছে, এবার টেকনিক্যাল দিক থেকে নতুন পরিকল্পনা নিতে চাইছে বর্তমান প্রশাসন। সেই পরিকল্পনায় ইউরোপীয় ফুটবল কাঠামোর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কারও উপস্থিতি চাই, যিনি কেবল কোচ নয়, টেকনিক্যাল রোডম্যাপ, কোচিং মান উন্নয়ন, একাডেমিক গঠন ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় দক্ষ হবেন।
এ প্রেক্ষাপটেই বাছাই করা হয়েছে ডি ক্রুইফের নাম। তার সাবেক সহকারী কোস্টারকেও আনতে চাওয়া হচ্ছে যেন বয়সভিত্তিক দল ও গ্রাসরুট পর্যায়ে অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণ ঘটে।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ফুটবল উন্নয়নের কথা বলা হলেও বাস্তবতা বলছে, কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে টেকনিক্যাল স্তরে দক্ষ লোকবলের অভাব ছিল সবসময়। এবার যদি ডি ক্রুইফ ও কোস্টার জুটি ফের আসে, তাহলে আবার নতুন করে আলোচনায় আসতে পারে দেশের ফুটবল ভবিষ্যৎ।
যদিও এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি, তবে আলোচনা চলমান। দুজনের আগ্রহ রয়েছে, বাফুফেও নতুন পথ খুঁজছে। দেখা যাক, দশ বছর আগে যিনি জাতীয় দলের দায়িত্বে ছিলেন, তিনিই কি নতুনভাবে এবার বাংলাদেশ ফুটবলের হাল ধরতে আসছেন? সময়ই দেবে তার উত্তর।
বাংলাবার্তা/এমএইচ