
ছবি: সংগৃহীত
ঢালিউডের আলোচিত অভিনেত্রী মিষ্টি জান্নাত আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে এবার কোনো সিনেমার চরিত্র নয়, বরং ব্যক্তিগত সম্মানহানির অভিযোগ ঘিরেই সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছেন এই অভিনেত্রী। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিস্ফোরক পোস্টে মিষ্টি জান্নাত তার বিরুদ্ধে ‘মানহানিকর’ মন্তব্য ও কনটেন্ট প্রচারের অভিযোগ তুলে ১২৭ জনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
মিষ্টির এই ঘোষণার পরপরই সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। একদিকে যেমন অনেকে তার সাহসিকতাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, অন্যদিকে কিছু ব্যবহারকারী তার অভিযোগের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে মিষ্টি জান্নাত লিখেছেন— “কিছু পেজ, তথাকথিত সাংবাদিক এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটরের পাশাপাশি ১২৭ জন ফেসবুক ব্যবহারকারী আমার অফিসিয়াল পেজে কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর মন্তব্য করেছে। আমরা ইতিমধ্যে এসব আইডির স্ক্রিনশট, লিংক ও অন্যান্য প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। আমার আইনজীবী, পরিবারের সদস্য এবং অনুসারীরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।”
তিনি আরও দাবি করেন, “আমার সম্মানহানির পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তারা পরিকল্পিতভাবে আমার নাম নিয়ে মনগড়া সংবাদ বানাচ্ছে, ভুয়া ভিডিও তৈরি করছে এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়াচ্ছে। এই চক্রের সদস্যদের কোনো ক্ষমা নেই। অতি দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
মিষ্টি জান্নাত তার পোস্টে আরও বলেন, “একদল লোক পেছনে লেগেই আছে। এখন আর কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। আমাকে হেয় করতে, সামাজিকভাবে বিব্রত করতে ও মানসিকভাবে দুর্বল করে দিতে তারা যা ইচ্ছা তাই বলছে। কিন্তু এখন আমি চুপ থাকবো না। যারা ভিডিও বানিয়েছে, পোস্ট দিয়েছে, বাজে কমেন্ট করেছে— সবাইকে একে একে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।”
মিষ্টির এই পদক্ষেপের পর সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় জোর আলোচনা। তার অনুরাগীরা মন্তব্য করছেন, “অবশেষে একজন সাহস করে এগিয়ে এলেন। যেকোনো তারকার সম্মান নিয়ে যারা খেলা করে, তাদের শাস্তি হওয়া দরকার।” অনেকে আবার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, “১২৭ জন একসঙ্গে অভিযুক্ত— এটা যেন হয়রানির পর্যায়ে না চলে যায়।”
তবে অনেকেই জানতে চেয়েছেন, কোন ঘটনায় বা কনটেন্ট ঘিরে এতবড় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হলেন মিষ্টি জান্নাত? এ বিষয়ে অভিনেত্রী নিজে বিস্তারিত কিছু না বললেও, ধারণা করা হচ্ছে সম্প্রতি তার কিছু ছবি ও ভিডিওর খণ্ডাংশ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে যেসব বিভ্রান্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট তৈরি হয়েছে, তা-ই এর মূল কারণ।
ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, মিষ্টি জান্নাত এরই মধ্যে একজন খ্যাতনামা সাইবার আইনের বিশেষজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ওই আইনজীবীর নেতৃত্বে একটি আইনি টিম প্রাথমিকভাবে ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটকের কয়েকটি পেজ ও অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করেছে এবং আইসিটি আইন অনুযায়ী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে, সাইবার ট্রাইব্যুনাল এবং পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সঙ্গে মিষ্টির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের এই অভিনেত্রী নানা সময় বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনায় এসেছেন। কখনও গ্ল্যামারাস ফটোশুট, কখনও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে— সবসময়ই তিনি মিডিয়ার আলোচনায় থেকেছেন। তবে এবার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং অনেক বেশি স্পর্শকাতর।
ব্যক্তিগত সম্মান ও সামাজিক মর্যাদার প্রশ্নে মিষ্টি জান্নাত যে এবার আর পিছু হটবেন না, তা তার সাম্প্রতিক পোস্ট থেকেই স্পষ্ট।
তারকাদের ব্যক্তিজীবন নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ‘ব্ল্যাক হিউমার’, ট্রল এবং অপপ্রচার এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু সেই প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার দৃষ্টান্ত খুব কমই দেখা যায়। মিষ্টি জান্নাতের আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা হয়তো ভবিষ্যতে আরও অনেক তারকাকে সাহস জোগাবে, যারা সামাজিক মাধ্যমে অপমানের শিকার হন, কিন্তু চুপ করে থাকেন।
তবে এও দেখা গুরুত্বপূর্ণ— ১২৭ জনের বিরুদ্ধে করা এই আইনি উদ্যোগ কতটা কার্যকর হয় এবং তা আদৌ কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে কিনা। এখন সকলের দৃষ্টি মিষ্টির পরবর্তী পদক্ষেপ ও দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আচরণের দিকে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ