
ছবি: সংগৃহীত
গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল—যিনি এক সময় তার অসাধারণ কণ্ঠে পুরো উপমহাদেশ মাত করেছিলেন, এখন তাকে ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে তার ব্যক্তি জীবনের জটিল টানাপোড়েন। সম্প্রতি নারী নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে আলোচনায় আসা এই শিল্পী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আর এই মুক্তির পরে আরও একবার সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছেন তিনি—তবে এবার তার ব্যক্তিগত জীবনের দ্বৈত বাস্তবতা ঘিরে।
গতকাল মঙ্গলবার (২৪ জুন) ঢাকার ডেমরা থানায় দায়ের হওয়া নারী নির্যাতন এবং পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় এক হাজার টাকার মুচলেকায় জামিন পান নোবেল। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে আজ বুধবার (২৫ জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার সময় সাংবাদিক ও উপস্থিত জনতার নজর কাড়েন তার বর্তমান স্ত্রী প্রিয়া। সূত্র বলছে, নোবেলকে নিতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর এলাকার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আসেন প্রিয়া নিজেই। মুক্তির পর স্বামী-স্ত্রী দু’জনকে কারাগার চত্বরে একসঙ্গে সময় কাটাতে দেখা যায়। মোটরসাইকেলে চড়ে তারা কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করেন এবং উভয়কে বেশ হাসিখুশি ও স্বস্তিতে দেখা যায়। এমন দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোনো নতুন জীবনযাত্রার শুরু হচ্ছে তাদের জন্য। কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জেলার এ কে এম মাসুম জানান, জামিনের কাগজ যাচাই-বাছাই শেষে যথারীতি সকালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
তবে যতটা সরল মনে হচ্ছে বর্তমান সময়, অতীত ততটাই প্যাঁচালো। নোবেলের এই জামিন, নতুন স্ত্রীর উচ্ছ্বাস ও জনসম্মুখে ঘোরাফেরা—সবকিছুই এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে, যা করেছেন তার প্রথম স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদ। সালসাবিলের সেই পোস্টে সরাসরি কারও নাম উল্লেখ না থাকলেও ইঙ্গিত স্পষ্ট যে সেটি সম্ভবত নোবেলকে উদ্দেশ করেই লেখা।
সালসাবিলের লেখায় উঠে এসেছে এক ব্যঙ্গাত্মক অথচ আবেগতাড়িত ক্ষোভের প্রকাশ। তিনি লেখেন: “এক ব্যাক্তি প্রবাসে গিয়েছিল বউকে বাংলাদেশে রেখে। কোর্ট নাকি নির্দেশ দিয়ে তার বউকে আরেকজনের জামাই এর সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে — খুবই হাস্যকর! গোপালগঞ্জের মানুষ বলে কথা!”
এই পোস্টটিকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা ও জল্পনা-কল্পনা। নেটিজেনদের একাংশ মনে করছেন, নোবেলের গ্রামের বাড়ি যেহেতু গোপালগঞ্জে, তাই পোস্টের শেষ বাক্যটিই মূলত নিশ্চিত করে দেয় যে লেখাটি তার উদ্দেশ্যেই লেখা হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এটা সম্ভবত সালসাবিলের দীর্ঘ চুপ থাকার পর একটি প্রতীকী প্রতিবাদ বা আবেগের বহিঃপ্রকাশ।
প্রসঙ্গত, সালসাবিল মাহমুদের সঙ্গে নোবেলের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ এখনও হয়নি—এমনটাই জানা গেছে নিকটজনদের মাধ্যমে। যদিও সালসাবিল বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন, তবুও নোবেলের দ্বিতীয় বিয়ের পর এমন সময়ে তার এই ফেসবুক পোস্ট নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অন্যদিকে, নোবেল ও তার বর্তমান স্ত্রী প্রিয়া নতুন জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন বলেই মনে করছেন অনেকে। জামিন পাওয়ার পর থেকে প্রিয়া সবসময় নোবেলের পাশে রয়েছেন, আদালত ও কারাগারে উপস্থিতি থেকে শুরু করে সমর্থন পর্যন্ত সবখানেই তাকে সক্রিয়ভাবে দেখা যাচ্ছে। তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, নোবেল ও প্রিয়া বর্তমানে পারিবারিকভাবে নতুন অতিথির অপেক্ষায় আছেন। আইনজীবীদের মতে, প্রিয়া বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা এবং এই সময়টাতে নোবেলের মুক্তি ও পাশে থাকা তার জন্য মানসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এই সবকিছুর মাঝেই পুরনো সম্পর্কের না-বলা ইতিহাস, ভাঙনের রেশ এবং সামাজিক-মানসিক চাপ—সব মিলিয়ে এক জটিল বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছেন নোবেল। তিনি নিজে এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও, তার চারপাশের ঘটনাপ্রবাহ বলছে, তার জীবন এখন বহুস্তরীয় নাটকীয়তায় মোড়ানো।
এক সময়ের জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পীর পেশাগত জীবনে যেমন উত্থান-পতনের গল্প রয়েছে, তেমনি তার ব্যক্তিগত জীবনও এখন একের পর এক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। এখন দেখার বিষয়, এই আলোচনা গায়কের ভবিষ্যত ক্যারিয়ারে কতটা প্রভাব ফেলবে এবং পুরনো সম্পর্কগুলোর গতি কোন দিকে মোড় নেয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ