
ছবি: সংগৃহীত
বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করল শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (NTRCA)। অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের জন্য জাতীয় মেধাতালিকা (National Merit List) প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে প্রকাশিত এই মেধাতালিকা থেকে এবার দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়োগপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড়সড় অগ্রগতি হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছে শিক্ষা প্রশাসন।
একইসঙ্গে এনটিআরসিএ ঘোষিত ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এক লাখেরও বেশি শূন্য পদে নিয়োগের আবেদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে, যা ইতোমধ্যে নতুন প্রার্থীদের মধ্যে আশাবাদের সঞ্চার করেছে।
প্রকাশিত মেধাতালিকা এনটিআরসিএর নিজস্ব ওয়েবসাইটে (www.ntrca.gov.bd) রাত থেকেই উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। উত্তীর্ণ প্রার্থীরা তাদের রোল নম্বর, নিবন্ধন নম্বর ও জন্মতারিখ ব্যবহার করে নিজ নিজ অবস্থান জানতে পারছেন।
গত ২২ জুন এনটিআরসিএ ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যেখানে মোট ১ লাখ ৮২২টি এমপিওভুক্ত শূন্যপদের তালিকা দেওয়া হয়। পদগুলো নিম্নরূপভাবে বিভাজিত—
-
স্কুল ও কলেজ পর্যায়: ৪৬,২১১টি
-
মাদরাসা, আলিয়া ও দাখিল পর্যায়: ৫৩,৫০১টি
-
কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা: ১,১১০টি
এই বিশাল নিয়োগ প্রক্রিয়া বেসরকারি শিক্ষাখাতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা দীর্ঘদিন পর একটি বৃহৎ নিয়োগপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
আগ্রহী প্রার্থীরা এনটিআরসিএর নির্ধারিত অনলাইন পোর্টাল (http://ngi.teletalk.com.bd) এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
-
আবেদন শুরু: ২২ জুন ২০২৫
-
আবেদন ও ফি জমার শেষ সময়: ১০ জুলাই ২০২৫, রাত ১২টা
-
আবেদন ফি: ১,০০০ টাকা (টেলিটক মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে জমা দিতে হবে)
ফি জমা না দিলে আবেদন অবৈধ বলে গণ্য হবে।
বয়সসীমায় পরিবর্তন ও সনদের মেয়াদ
নতুন নিয়মে বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলপ্রকাশের তারিখ অনুযায়ী।
-
৩৫ বছরের মধ্যে থাকতে হবে ৪ জুন ২০২৫ তারিখে
-
সনদের মেয়াদ গণনা করা হবে ফল প্রকাশের দিন থেকে ৩ বছর পর্যন্ত
-
নারী কোটা সম্পর্কেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে
সতর্কতা ও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ
এনটিআরসিএ আবেদনকারীদের সতর্ক করে বলেছে—
-
কোনো প্রার্থী যদি ভুয়া তথ্য প্রদান করেন, তবে তাঁর সুপারিশ বাতিল করা হবে এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
-
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল এবং এমপিও স্থগিত করার মতো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে
শূন্যপদ যাচাই নিয়ে এনটিআরসিএর অবস্থান
এনটিআরসিএ জানিয়েছে, শূন্যপদসংক্রান্ত তথ্যগুলো প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মাধ্যমে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসারদের যাচাইয়ের পর সংগ্রহ করা হয়েছে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান ভুল বা অতিরঞ্জিত তথ্য দেয়, তবে সে দায় এনটিআরসিএ নেবে না।
এনটিআরসিএর ভূমিকা ও ইতিহাস
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (NTRCA) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান।
-
এটি দেশের বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠিত হয়
-
এনটিআরসিএ লিখিত, প্রিলিমিনারি ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধিত শিক্ষক হিসেবে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করে
-
ইতিপূর্বে এনটিআরসিএর বিভিন্ন গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে লক্ষাধিক শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন, যদিও কিছু প্রক্রিয়া সময়মতো সম্পন্ন না হওয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়
শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বৃহৎ নিয়োগ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে গুণগত উন্নয়ন ঘটতে পারে। তবে তারা সরকার ও এনটিআরসিএকে আরও স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে মেধাবীরা প্রত্যাশিত প্রতিষ্ঠান ও পদের জন্য সঠিকভাবে বিবেচিত হতে পারেন।
একদিকে যেখানে দেশের শিক্ষা খাতে শিক্ষকের ঘাটতি দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা হিসেবে থেকে গেছে, অন্যদিকে এবারকার গণবিজ্ঞপ্তি এবং মেধাতালিকার যৌথ প্রকাশ সেই সংকট মোকাবেলায় আশার আলো জাগিয়েছে।
অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের জাতীয় মেধাতালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে হাজার হাজার তরুণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষানবিশ শিক্ষক তাদের স্বপ্নের শিক্ষাপেশায় যুক্ত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন।
এখন প্রয়োজন, এই প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং সময়োপযোগীভাবে বাস্তবায়ন করা—যাতে করে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আর কোনো হতাশা বা অনিশ্চয়তা না থাকে, বরং শিক্ষকতা পেশাটি আবারো শ্রদ্ধার আসনে সমাসীন হয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ