
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, ডিজি-সিআইসি, কর গোয়েন্দা ইউনিটের কমিশনারসহ একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে ভুয়া মোবাইল স্ক্রিনশট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এনবিআরের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। চলমান আন্দোলনের মধ্যেই এমন গুজব ছড়ানোর ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুতর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছে তারা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, এনবিআরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত নাম ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ভুয়া মোবাইল চ্যাট বা স্ক্রিনশট ছড়ানো হচ্ছে। এসব স্ক্রিনশটে কথোপকথনের মতো উপস্থাপন করে এমন ভ্রান্ত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা চলছে যে, এনবিআরের ভেতরে চরম অনৈক্য, পক্ষপাত, এমনকি ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড চলছে। এসব চ্যাটের অনেকাংশে এনবিআরের চেয়ারম্যান, ভ্যাট ও কর গোয়েন্দা ইউনিটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথিত কথোপকথন দেখানো হচ্ছে, যা এনবিআরের দাবি অনুযায়ী পুরোপুরি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
এনবিআরের তদন্তে উঠে এসেছে, এই ভুয়া স্ক্রিনশট তৈরিতে বিদেশে নিবন্ধিত একটি মোবাইল নম্বর এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে। প্রযুক্তির অপব্যবহার করে এমন স্ক্রিনশট তৈরি এবং তা সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে এনবিআরের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা তৈরির অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এমন কর্মকাণ্ডকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টাও বলেও উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে এনবিআরের ভেতরে ব্যাপক অস্থিরতা বিরাজ করছে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খানের অপসারণসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। এরই মধ্যে চলছে কলম বিরতি, সভা-সমাবেশ, এমনকি অবরোধও। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হলেও মাঠপর্যায়ে এখনো অসন্তোষ রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে ভুয়া স্ক্রিনশট ছড়িয়ে আন্দোলনের গতিপথ প্রভাবিত করার একটি সুপরিকল্পিত অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে এনবিআরের পক্ষ থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক উপস্থাপনা দ্বারা এনবিআরের কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে, যা আমাদের নজরে এসেছে। আমরা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় এসব স্ক্রিনশটের উৎস ও উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখছি।”
এনবিআর আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো একটি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। এমন গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সবশেষে, এনবিআরের পক্ষ থেকে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ জনগণকে সতর্ক করে বলা হয়—“এসব মনগড়া ভুয়া স্ক্রিনশট বা কথোপকথনের ওপর ভিত্তি করে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত না হতে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। এনবিআর একটি পেশাদার, নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে সকল বিষয়ে তথ্য-ভিত্তিক পদক্ষেপ নেয় এবং কোনো প্রকার বিভ্রান্তিকর প্রচারকে বরদাশত করে না।”
বিজ্ঞপ্তিতে সবাইকে গুজব থেকে বিরত থাকার এবং দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাবার্তা/এসজে