
ফাইল ছবি
দেশজুড়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুও। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে, যা চলতি বছরের জন্য এক দুঃখজনক সংযোজন।
এছাড়া একই সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মোট ১৯৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে। এদের মধ্যে বরিশাল, ঢাকা মহানগর ও রাজশাহী বিভাগে আক্রান্তের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে একজন ১৪ বছরের কিশোর এবং অপরজন ৪৮ বছর বয়সী নারী। এই দুইজনের মৃত্যু যুক্ত হলো চলতি বছরের ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতির মর্মান্তিক পরিসংখ্যানে।
ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন বরিশাল বিভাগের হাসপাতালগুলোতে— ৭৪ জন।
এরপরের অবস্থান ঢাকায়— ঢাকা মহানগরে ৬০ জন, ঢাকা বিভাগের অন্যান্য এলাকায় ৩০ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৮ জন, চট্টগ্রামে ৮ জন, সিলেট বিভাগে ৩ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২ জন নতুন রোগী শনাক্ত ও ভর্তি হয়েছেন।
এ ছাড়া অন্যান্য বিভাগেও ডেঙ্গুর বিস্তার রয়েছে, তবে সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর (২০২৫ সাল) এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ এবং ১৮ জন নারী।
অন্যদিকে, সারা দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬৫ জনে। এই সংখ্যা দিন দিন আরও বাড়ছে, যা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নতুন করে চিন্তায় ফেলছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্ষা মৌসুমের প্রকৃত সূচনা না হলেও, চলতি সময়ে এই ডেঙ্গু সংক্রমণের হার অস্বাভাবিকভাবে বেশি। বিশেষ করে, বরিশাল, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের শহরাঞ্চলে রোগী সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে।
তারা আশঙ্কা করছেন, আগামী জুলাই-আগস্ট মাসে বর্ষার তীব্রতা বাড়লে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এখন থেকেই প্রয়োজন জোরালো মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দ্রুত রোগ শনাক্তে পরীক্ষাগারের সক্ষমতা বাড়ানো।
ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশির ভাগই বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে মশার কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাই পরিবার ও বাসাবাড়িতে পানি জমে থাকা কোনো স্থান না রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বিশেষ করে— টবের নিচে, পরিত্যক্ত টিন, নির্মাণাধীন ভবনে, প্লাস্টিক পাত্র, ফ্রিজ বা এসির নিচে জমে থাকা পানি থেকে মশা বিস্তার ঘটাতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব পরিবারে শিশু ও বয়স্ক সদস্য আছেন, তাদের প্রতি বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হচ্ছে।
সরকারি বিভিন্ন সংস্থা, বিশেষ করে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিভাগগুলোকে এই মুহূর্তে মশক নিধনে সর্বোচ্চ সক্রিয়তা দেখাতে হবে।
এছাড়া গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনসচেতনতা প্রচারণা আরও জোরদার করতে হবে, যাতে মানুষ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পায়।
ডেঙ্গু বর্তমানে শুধু একটি মৌসুমি রোগ নয়, বরং দেশের জন্য এটি একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনের আক্রান্ত ও মৃত্যুর এই তালিকা প্রমাণ করছে, অবহেলার কোনো সুযোগ নেই।
জনগণের পক্ষেও সচেতন ও দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি, কারণ সরকার বা চিকিৎসা ব্যবস্থা একা এই সংকট সামাল দিতে পারবে না। নিজ বাড়ি, এলাকা ও পরিবারকে রক্ষা করতে প্রতিটি নাগরিকের অংশগ্রহণ এখন অপরিহার্য।
স্মরণ করিয়ে দেওয়া দরকার— ডেঙ্গু প্রতিরোধযোগ্য, তবে তার জন্য চাই দ্রুততা, পরিকল্পনা ও সম্মিলিত প্রতিরোধ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ