
ছবি: সংগৃহীত
দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে চলা ১২ দিনের তীব্র যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ইরানি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হওয়া ভাষণে তিনি ইহুদিবাদী সরকারকে পরাজিত ঘোষণা করে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান এবং ইরানের অসাধারণ ঐক্যের প্রশংসা করেন।
আয়াতুল্লাহ খামেনি ভাষণে বলেন, “ইহুদিবাদী সরকার পরাজিত হয়েছে। তাদের উচ্চবাচ্য সত্ত্বেও তারা ইসলামি প্রজাতন্ত্রের শক্তির কাছে চূর্ণবিচূর্ণ ও ধ্বংসপ্রাপ্ত।” তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েল বহুদিন ধরে একটি ভুয়া আধিপত্য গড়ে তুলেছিল, কিন্তু এবার তারা ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর আঘাতে মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপের বিষয়েও তিনি কথা বলেন। খামেনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে সরাসরি জড়িত ছিল। কারণ তারা বুঝেছিল, যদি হস্তক্ষেপ না করে, তবে ইসরায়েলের পতন ঘটবে। কিন্তু তাদের আগ্রাসন কিছুই অর্জন করতে পারেনি।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘চূড়ান্ত আঘাত’ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, “আমরা বিজয়ী হয়েছি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই জয়ে আমি দেশের সবাইকে অভিনন্দন জানাই।”
খামেনি তার ভাষণে ইরানি জনগণের একতা ও দৃঢ়তার প্রশংসা করে বলেন, “৯ কোটি মানুষের এই দেশ তাদের সশস্ত্র বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে এক হয়ে শত্রুর মোকাবিলা করেছে। ইরানিরা তাদের স্বতন্ত্র চরিত্রের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে, যখন প্রয়োজন হবে, তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ে।”
জাতীয় নেতা হিসেবে তিনি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দেন, “যদি কেউ আবার ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা করে, তাহলে তাদেরকে চড়া মূল্য দিতে হবে। ইসরায়েল কখনও ভাবেনি যে তারা এমন মারাত্মক ধাক্কা খাবে।”
তিনি আরও জানান, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শত্রুদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সব স্তর পেরিয়ে তাদের প্রাণকেন্দ্রগুলোতে আঘাত হেনেছে।”
ভাষণের এক অংশে খামেনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যকে খণ্ডন করেন। তিনি বলেন, “ট্রাম্প বলেছেন, তারা ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংস করবে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাদের পারমাণবিক অবকাঠামোর বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণ কোনো সাফল্য অর্জন করেনি।”
খামেনি বলেন, “ইরানিরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। সবাই একসঙ্গে কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার ঘটনা তুলে ধরেছে, যা সত্যকে আড়াল করার চেষ্টামাত্র।”
তিনি ট্রাম্পের ‘ইরানকে আত্মসমর্পণ করতে হবে’ উক্তিকেও উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “আমরা কখনও আত্মসমর্পণ করব না। আমরা শক্তিশালী জাতি। ইরান মার্কিনিদের মুখে চপেটাঘাত করেছে।”
খামেনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ছিল ইরানকে বশীভূত করা, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। তারা ইরানিদের আত্মসমর্পণের কথা বলে অপমান করেছে, যা কখনও সফল হবে না।”
তিনি দেশের জনগণকে শক্তিশালী ও বিজয়ী হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “আমাদের জনগণ অসাধারণ, শক্তিশালী এবং ইতিহাসের অংশ। তারা সবসময় সম্মানিত ও বিজয়ী থাকবে। আল্লাহর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।”
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির এই ভাষণ শুধু দেশীয় জনগণকে নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে ইরান তার সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। ১২ দিনের সংঘর্ষের পর এই জয়ের ঘোষণায় ইরানের রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তির প্রতি আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, খামেনির এই কঠোর ভাষণ ভবিষ্যতে সম্ভাব্য কোন নতুন আক্রমণ থেকে ইরানের কঠোর প্রতিরোধের সংকেত দেয়। পাশাপাশি, ভাষণটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ ও দেশীয় ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
অতীতের মত, এই সংকটপূর্ণ সময়ে খামেনির ভাষণ ইরানের জাতীয়তা ও সামরিক সক্ষমতা জোরদার করার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সংক্ষেপে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ভাষণ ছিল দেশের অসাধারণ ঐক্যের প্রতীক এবং আগামি দিনেও যেকোনো হুমকির বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধের ঘোষণা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ