
ছবি: সংগৃহীত
বলিউড অভিনেত্রী সানি লিওন ও তার স্বামী ড্যানিয়েল ওয়েবার শুধু পর্দার তারকা নন, ব্যক্তিগত জীবনেও তারা বহু অভিভাবকের জন্য উদাহরণ হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে সন্তানদের বড় করে তোলার ক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতি অনেকটাই ভিন্ন এবং প্রগতিশীল। ভারতীয় চলচ্চিত্রে ব্যস্ততম তারকা হওয়া সত্ত্বেও সানি ও ড্যানিয়েল পারিবারিক মূল্যবোধ, অভ্যাস ও আত্মনির্ভরতা গঠনে যে পথ অনুসরণ করছেন, তা অনেক ভারতীয় বাবা-মায়ের চিন্তাভাবনাকেও নাড়া দিচ্ছে।
কানাডায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা সানি লিওন জানেন, একজন শিশু কেমন করে ছোটবেলা থেকেই নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে পারে। সে অভিজ্ঞতাই তিনি ও তার স্বামী এখন প্রয়োগ করছেন নিজেদের সন্তানদের ওপর। বর্তমানে তিন সন্তানের মা সানি জানান, “যে সংস্কৃতিতে আমি ও ড্যানিয়েল বড় হয়েছি, সেখানে ছোট থেকেই নিজের কাজ নিজে করতে শেখানো হতো। ঘরের কাজ, জামাকাপড় গোছানো, নিজের প্রয়োজন নিজে মেটানো ছিল স্বাভাবিক অভ্যাস। সে অভ্যাসই আমরা আমাদের সন্তানদের শেখাতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “আমার সন্তানদের যদি সবসময় সহকারীর সাহায্যে বড় করি, তাহলে তারা কখনোই শিখবে না কীভাবে নিজের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে হয়। আমাদের মনে হয়েছে, শিশুরা নিজের কাজ করলে আত্মবিশ্বাসও বাড়ে এবং তারা আরও পরিণত হয়।”
সম্প্রতি একটি পারিবারিক সফরে ড্যানিয়েল ও সানি সিদ্ধান্ত নেন—এই পুরো ছুটির সময় তারা কোনো সহকারী রাখবেন না। সানির ভাষায়, “আমরা সন্তানদের নিয়ে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলাম। দুই সপ্তাহ তারা নিজেরা সব কিছু করেছে। জুতা খোলা, জামা-কাপড় গুছানো, নিজের ব্যাগ ঠিকঠাক রাখা—এসব কিছুই তারা নিজেরা করেছে। এটা শুধু তাদের দায়িত্বশীলতা বাড়িয়েছে না, বরং তারা গর্ব বোধ করেছে যে তারা নিজের কাজ নিজেরা করতে পেরেছে।”
মনোবিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন, শিশুরা যদি ছোট থেকেই আত্মনির্ভর হওয়ার শিক্ষা পায়, তাহলে তারা জীবনের জটিল পরিস্থিতিতে আরও স্থির, আত্মবিশ্বাসী এবং কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হয়। এতে করে তারা শিখে যায় দায়িত্ব কাকে বলে এবং কিভাবে একা নিজের সিদ্ধান্তে এগিয়ে যেতে হয়। সন্তানদের এমনভাবে বড় করে তোলা মানে শুধু ভালো ছাত্র বানানো নয়, বরং জীবনের জন্য প্রস্তুত করা।
সানি ও ড্যানিয়েল বিশ্বাস করেন—একজন শিশুর প্রকৃত শিক্ষা কেবল পাঠ্যবই পড়ে নয়, বরং জীবনের বাস্তবতা থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও নিজে কিছু করে শেখার মধ্যেই নিহিত। সানি বলেন, “আমাদের সমাজে অনেক সময় শিশুরা বড় হয়েও নিজ দায়িত্ব নিতে শেখে না। শুধু শিক্ষা নয়, জীবনের জন্য প্রয়োজন সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, সময়জ্ঞান এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা।”
সানি ও ড্যানিয়েলের এই পদক্ষেপ নতুন এক আলোচনার জন্ম দিয়েছে বলিউড অভিভাবক সমাজেও। তারা দেখিয়ে দিয়েছেন, সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার হলো তাকে আত্মনির্ভর ও দায়িত্বশীল করে তোলা। একজন সন্তান যদি শিখে যায় কীভাবে নিজের সমস্যার সমাধান নিজে করতে হয়, তাহলে সে ভবিষ্যতে যেকোনো পরিবেশেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে—এটাই সানি ও ড্যানিয়েলের অভিভাবকত্বের মূলমন্ত্র।
এই ব্যতিক্রমী ও অনুকরণীয় পদ্ধতির মধ্য দিয়ে সানি ও ড্যানিয়েল শুধু সন্তানদের জন্য নয়, সমাজের জন্যও রেখে চলেছেন এক অনন্য বার্তা: স্বাবলম্বিতা শেখানোর শিক্ষা শুরু হোক ঘর থেকেই।
বাংলাবার্তা/এমএইচ