
ছবি: সংগৃহীত
সকালের সময়টা দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দীর্ঘ রাত্রির উপবাস শেষে শরীরের প্রয়োজন হয় সঠিক পুষ্টির, যা সারাদিনের কর্মক্ষমতা ও মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়তা করে। বিশেষ করে সকালের নাশতা হওয়া উচিত এমন কিছু দিয়ে যা গরম, সহজে হজমযোগ্য, এবং শরীর ও মস্তিষ্ককে প্রয়োজনীয় এনার্জি সরবরাহ করে। অনেকেই ব্যস্ততা বা অলসতার কারণে সকালের নাশতা এড়িয়ে যান, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই স্বাস্থ্য সচেতন সবার উচিত এমন কিছু নাশতা বেছে নেওয়া, যা পুষ্টিকর, সহজে প্রস্তুতযোগ্য এবং মুখরোচক। আজ জানুন, পাঁচটি ঘরোয়া ও সাশ্রয়ী নাশতার কথা, যা সকালকে করে তুলবে প্রাণবন্ত ও সুস্থতায় ভরপুর।
১. খিচুড়ি ও ডিম ভাজি: প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের আদর্শ সংমিশ্রণ
সকালে গরম গরম খিচুড়ি শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়। ভাজা ডিম যোগ করলে এর পুষ্টিগুণ আরও বেড়ে যায়। খিচুড়িতে চাল ও ডালের সংমিশ্রণে পাওয়া যায় জটিল কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন, যা ধীরে ধীরে এনার্জি দেয় এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর সঙ্গে একটি বা দুটি ডিম ভাজলে প্রোটিনের চাহিদাও পূরণ হয়, যা মাংসপেশি গঠনে সহায়ক। চাইলে খিচুড়িতে সামান্য ঘি, আদা-রসুন বাটা এবং মৌসুমি সবজি মিশিয়ে দিতে পারেন। এটি শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবার জন্যই উপযোগী একটি খাবার।
২. সবজি বা মুরগির স্যুপ: হালকা কিন্তু পুষ্টিকর
যারা সকালে হালকা খাবার খেতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য সবজি বা মুরগির স্যুপ একটি চমৎকার বিকল্প। এতে থাকে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। বিশেষ করে পালং শাক, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, বাঁধাকপি—এই সবজিগুলো দিয়ে তৈরি স্যুপ দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতে পারে। মুরগির হাড় দিয়ে তৈরি স্টকে তৈরি স্যুপে কোলাজেন এবং অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সকালের ঠান্ডা পরিবেশে গরম স্যুপ যেমন স্বস্তিদায়ক, তেমনি এটি পেটকে হালকা রাখে ও হজমে সহায়তা করে।
৩. পরোটা ও সবজি কারি: দেশি ঘরানার পুষ্টি
ঘরে বানানো পরোটা ও সবজি কারি বহু পরিবারেই সকালবেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার। পরোটায় থাকে পর্যাপ্ত ক্যালোরি ও কার্বোহাইড্রেট, যা শরীরকে সকালের জন্য প্রাথমিক শক্তি জোগায়। এর সঙ্গে সবজি বা ডালের তৈরি ঝোল জাতীয় তরকারি খেলে পাওয়া যায় ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল। সবজির মধ্যে গাজর, ফুলকপি, বেগুন, কাঁচা পেঁপে, করলা, বরবটি ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। পরোটার সঙ্গে এক কাপ গরম চা খেলে দিনের শুরুটা হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত ও আনন্দময়। তবে অতিরিক্ত তেল ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।
৪. দুধ-চিড়া ও মধু: দ্রুত তৈরি, সহজে হজমযোগ্য
চিড়া বাঙালি ঘরের বহুল ব্যবহৃত এক খাবার। সকালের নাশতায় এটি দুধ ও মধুর সঙ্গে খেলে পুষ্টিগুণ বহুগুণে বেড়ে যায়। চিড়ায় থাকে ফাইবার ও আয়রন, যা হজমে সহায়ক এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে কার্যকর। গরম দুধে চিড়া ভিজিয়ে কিছুক্ষণ রেখে তার মধ্যে মধু ও সামান্য কলা বা খেজুর যোগ করলে এটি হয়ে ওঠে অত্যন্ত পুষ্টিকর ও উপাদেয় একটি খাবার। যারা বেশি খেতে পারেন না কিংবা হালকা কিছু পছন্দ করেন, তাদের জন্য দুধ-চিড়া দারুণ একটি সমাধান। এটি বাচ্চাদের টিফিনেও ব্যবহারযোগ্য।
৫. ওটস পোরিজ: আধুনিক স্বাস্থ্যসচেতনদের পছন্দ
ওটস একটি উচ্চ ফাইবার ও কম ফ্যাটযুক্ত খাদ্য, যা বিশ্বের নানা দেশে সকালের নাশতায় ব্যাপক জনপ্রিয়। ওটস দুধে রান্না করে এর মধ্যে মধু, বাদাম (কাজু, আমন্ড), কিশমিশ এবং কাটা ফল (আপেল, কলা, বেরি) মিশিয়ে নিলে এটি আরও বেশি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হয়ে ওঠে। ওটসের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, হজমপ্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। যারা ডায়েট মেনে চলেন, তাদের জন্য এটি আদর্শ নাশতা।
প্রতিদিন সকালের নাশতা যদি হয় পরিকল্পিত, তাহলে তা সারাদিনের কর্মক্ষমতায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে। খালি পেটে ঘর থেকে বের হওয়া শরীরের বিপাকক্রিয়া ও মানসিক স্থিতি উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। তাই জীবনযাত্রা যত ব্যস্তই হোক, কিছু সময় নিয়ে সকালের নাশতাকে গুরুত্ব দিন। খিচুড়ি থেকে শুরু করে ওটস পর্যন্ত—এই পাঁচটি পুষ্টিকর নাশতা আপনার সকালের তালিকায় নিয়মিত রাখুন। স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, মন থাকবে চনমনে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ